চাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি নিয়ে উত্তপ্ত সভা, ছাত্রদলের বর্জন
এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রাম থেকে:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে খসড়া আচরণবিধি নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সভায় শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নোত্তরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। মত প্রকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগে সভা বর্জন করে বেরিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খসড়া আচরণবিধি উপস্থাপন করেন নির্বাচন কমিশনার আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন।
উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, অধ্যাপক রুমানা আক্তার, অধ্যাপক বেগম ইসমত আরা হক প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী।
সভা চলাকালেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হঠাৎ সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের বহু প্রশ্ন থাকলেও কমিশন সীমিত সুযোগ দিয়েছে। তাই তারা সভা বর্জন করেছেন।
সভায় শিক্ষার্থীরা নির্বাচন সুষ্ঠু করার পথ, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অংশগ্রহণ, অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা, ডোপ টেস্ট, সাইবার সেল গঠন ও নিরাপত্তা ইস্যুতে নানা প্রশ্ন ও প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান প্রশ্ন তোলেন— স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্তরসূরিরা কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে? এ বিষয়ে আচরণবিধি বা গঠনতন্ত্রে কিছু বলা হয়নি। বাগছাস নেতা আশরাফ চৌধুরী বলেন, নয়জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে আছেন, এই অবস্থায় আচরণবিধি নিয়ে সভা কতটা যৌক্তিক? অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আহমেদ বলেন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু নাও হতে পারে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ডোপ টেস্টে শুধু প্রস্রাব নয়, রক্ত পরীক্ষা কার্যকরভাবে করা উচিত। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রহনন ঠেকাতে সাইবার সেল গঠনের দাবি জানান।
সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের সব মতামত নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে।
খসড়া আচরণবিধির মূল দিক:
খসড়া আচরণবিধিতে ১৭টি বিধান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ, প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারবে না, মোটরসাইকেল-রিকশা-ঘোড়ার গাড়ি-হাতি-ব্যান্ডপার্টি ব্যবহার করে প্রচারণা নিষিদ্ধ। ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তবে প্রার্থীর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ সংক্রান্ত বিধান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে আপাতত তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ সভায় ছাত্রদলের বর্জন ও শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক প্রশ্নে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলেও কমিশন আশ্বাস দিয়েছে— শিক্ষার্থীদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে।

























