রনজিত কুমার পাল (বাবু),স্টাফ রিপোর্টারঃ
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ উৎসব ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের ৩৫২ তম ঐতিহাসিক রথোৎসব-২০২২ এর ধর্মীয় রীতি নীতি অনুসরন করে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে ৪ই আষাঢ়-১৪৩০ বঙ্গাব্দ /২০ জুন-২০২৩ রোজ মঙ্গলবার।
রথোৎসব-মহামিলন। ধর্ম,বর্ণ শ্রেণী পেশা,ধনী,গরীব নির্বিশষে রথের রশি ধরে টানছেন,আনন্দ বিনিময় করছেন, এই সাম্যই রথযাত্রার মূল শিক্ষা।
রাজধানী ঢাকার অদূরে ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায়,বাংলা ১০৭৯ সালে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২০৪ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১২৫ বছর পর্যন্ত রথযাত্রা চলে এসেছে। তারপর বালিয়াটি জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় রথযাত্রা অব্যাহত থেকেছে, আরও ১৪৬ বছর। বাংলা ১৩৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপের পর মির্জাপুরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এগিয়ে আসেন রথযাত্রার উৎসব আয়োজন যা আজও অব্যাহত আছে।তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী শ্রী রাজীব প্রসাদ সাহা,স্হানীয় গণমান্য ব্যাক্তি এবং শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির কমিটির সহযোগিতায় শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের সেবা ও রথ পরিচালনায় দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করে যাচ্ছেন।
এবার ৪ আষাঢ় ১৪২০ বঙ্গাব্দ / ২০ শে জুন ২০২৩ খ্রী: রোজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা ও মাসব্যাপী রথমেলা।
এ দেশের সনাতনধর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই ধামরাইয়ে। ২৮ জুন বুধবার অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথ যাত্রা বা পুর্নযাত্রা অনুষ্ঠান। রথমেলা চলবে প্রায় মাসব্যাপী। রথমেলা উপলক্ষে সার্কাস সহ বিভিন্ন বিনোদন মুলক ষ্টল বসবে মেলায়।
চারশত বছরের সুপ্রাচীন এই উৎসবে লাখো পূর্ণার্থী ভক্তবৃন্দের মিলনমেলায় উদযাপন করা হবে রথোৎসব। রথ উৎসব উপলক্ষে রথমেলায় কারুশিল্পে সুপ্রসিদ্ধ ধামরাই শহরে প্রতি বছর নতুন প্রানের স্পন্দন জাগে বিভিন্ন পণ্যের বিপুল সমাহার।ফলে বাংলার গ্রামীন শিল্প বিকাশ লাভের সুযোগ পায়। প্রান্তিক ব্যবসায়ী সমাজ এখানে অনুষ্ঠিত মাসব্যাপী রথ মেলায় নিজেদের পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করে উপার্জনের পথ খুঁজে পায়। রথযাত্রা একটি সম্প্রদায়ের ধর্মোৎসব হলেও জাতি, ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে এটি সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে প্রকৃতপক্ষে একটি সর্বজনীন উৎসব।
এ’রথ উৎসব হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় প্রায় ৪০০ শত বৎসর পূর্ব হতে শুরু হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারনে এই উৎসব ব্যাপক ভাবে সার্বজনীনতা লাভ করেছে। এই ধর্মীয় রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ও ইতিহাস খ্যাত ধামরাইয়ে বেড়ানোর জন্য প্রতিটি বাসগৃহে দুরদুরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন এসে ভীড় করে। অতীতে বাংলাদেশ নয় বিদেশ থেকেও হাজারো ভক্তবৃন্দরা রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে ধামরাইয়ে এসে সমাগত হতো। এখনো আসে। পুরো উৎসবটিই কালের বিবর্তনে এখন ধর্মীয় ভাবধারা নয় সার্বজনীন স্রোতধারায় প্রভাবিত হচ্ছে।
এই ঐতিহবাহী রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা ধামরাইয়ে এখন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে,মেলায় শত শত ষ্টল বসার প্রস্তুতি চলছে। শ্রী শ্রী যশোমাধব মাধব মন্দির ও রথোৎসব পরিচালনা কমিটি কর্তৃক রথের যাবতীয় ও সাজ সজ্জার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এবারও রথ উৎসব ও মেলার উদ্বোধনী অনষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সানুগ্রহ সম্মতি দিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানণীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সানুগ্রহ সম্মতি দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় কুমার ভার্মা মহোদয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি,স্হানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব বেনজীর আহমদ এমপি সহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস(অবঃ), শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও আর পি সাহার পৌত্র রাজিব প্রসাদ সাহা প্রমূখ উপস্থিত থাকবেন।
ধামরাই যাত্রাবাড়ী শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দিরের
মেলাঙ্গনের মাধব মন্দির মাঠ, কায়েতপাড়াস্হ শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির ও ঐতিহাসিক শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথ মন্দির কমিটির উদ্যোগে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান কমিটির সহ-সভাপতি ডাঃ অজিত কুমার বসাক।
রথ উৎসব উপলক্ষে কায়েতপাড়াস্থ রথ খোলায় ও রথের সামনে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এ সময় ডাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা ও মহিলাদের উলু ধ্বনিতে মাধব মন্দিরের বর্তমান প্রধান পুরোহিত উত্তম কুমার গাঙ্গুলী ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। দুপুরে মাধব মন্দিরে ভোগ রাগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত হাজারো ভক্ত বৃন্দের মাঝে।
বিকেলে রথের সামনে লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে বিকেলে উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে রথটানা হবে বলে মন্দির কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও ধামরাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রনজিত কুমার পাল (বাবু) কে জানান।
বিকেল ৪টায় মাধব মন্দির থেকে মাধব বিগ্রহসহ অন্যান্য বিগ্রহগুলি নিয়ে এসে সারাবছর যেখানে রথটি থাকে সেই রথ খোলায়,রথের উপর মূর্তিগুলি স্থাপন করা হবে। এর পর বিকেল সাড়ে ৪ টায় রথের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রথখোলায় অস্থায়ী স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।
এই অনুষ্ঠানের আলোচানা সভা শেষে প্রধান অতিথি রথ উৎসবের পুরোহিতের হাতে প্রতিকী রশি প্রদানের মাধ্যমে রথ টানার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করবেন। এই রথটি মূর্তি সমেত লাখো ভক্ত নর-নারী পাটের রশি ধরে কায়েত পাড়ার রথ খোলা থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে টেনে পৌর এলাকার গোপনগরে। এখানেই রথটি প্রতিবছরের ন্যায় ৯ দিন অবস্থান করবে।
মাধব ও অন্যান্য বিগ্রহগুলি রথ থেকে নামিয়ে নিয়ে ৯ দিন পূজারীদের দ্বারা পুজিত হবে কথিত মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে।৯ দিন পর আগামী ২৮ জুন/১৪ই আষাঢ় অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব।