জীবনযুদ্ধে হার না মানা ছালেহার মানবসেবা আর ত্যাগের অজানা গল্প
জীবনযুদ্ধে হার না মানা ছালেহার মানবসেবা আর ত্যাগের অজানা গল্প
নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার বাবুপুর গ্রামে মা জাহানারা বেগমের কোলে জন্ম নেন ছালেহা বেগম। জন্মের আগেই বাবাকে হারানো এই নারীকে বেড়ে উঠতে হয়েছে নানার বাড়ির স্নেহছায়ায়, কিন্তু পৈতৃক ভিটের সম্পত্তি থেকেও ছিলেন বঞ্চিত। জীবনের শুরুটাই ছিল কঠিন—তবু পরাজয় শব্দটি তার অভিধানে নেই।
মা জাহানারা বেগম নিজেই ছোট একটি খামার গড়ে তুলে—২টি বাছুর, ৪টি ছাগল, ১০টি হাঁস ও ১০টি মুরগি পালন করে—মেয়ের শিক্ষার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। সেই সংগ্রামের মধ্যেই ছালেহা ধীরে ধীরে এগিয়ে যান শিক্ষাজীবনে। ১৯৯৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন।
উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়েও অর্থাভাবে কলেজজীবন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন মানুষের সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করার। বেসরকারি LMAF ও DMA কোর্স শেষে তিনি গ্রামে গ্রামে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন। পাশাপাশি গর্ভবতী নারীর নরমাল ডেলিভারিতেও ধাত্রী হিসেবে পাশে দাঁড়ান। গভীর রাতে ডাক পেলেই ছুটে যাওয়া—ছিল তার দৈনন্দিন মানবিক দায়িত্ব। যত্ন, ভালোবাসা আর আন্তরিক সেবায় তিনি হয়ে উঠেন এলাকার মানুষের জীবনের ভরসার নাম।
২০১০ সালের ১৯ মে ছালেহা বেগমের জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হয় স্বামী মোঃ ফখর উদ্দিনের সঙ্গে বিবাহের মধ্য দিয়ে। স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় তিনি মানবসেবার কাজে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যান।
বিয়ের মাত্র সাত মাসের মাথায় সেনবাগ পৌরসভা নির্বাচনে মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছালেহা বেগম—কোনো প্রচারণা ছাড়াই! জনগণের ভালোবাসা ও আস্থায় তিনি নির্বাচিত হন পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা ও মাতৃত্বভাতার উপযুক্ত প্রাপকদের সেবা নিশ্চিত করতে।
জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও সম্মানকে তিনি মনে করেন জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আর তাই দিনরাত্রি পরিশ্রম করে সমাজের অসহায়, অবহেলিত মানুষের কল্যাণই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য।
ভবিষ্যতে ছালেহা বেগমের স্বপ্ন সমাজের প্রতিটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানবসেবাকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ধরে রাখা।


















