১০:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

ওএমএস বিক্রি বন্ধ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে অসহায় মানুষের দীর্ঘশ্বাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক

মোঃ মাসুদ আলী পুলক,রাজশাহী থেকে:

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় টানা ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে রাজশাহী মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ডে সরকারের খোলাবাজার বিক্রয় (ওএমএস) কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।

এই দীর্ঘ সময় ধরে চাল ও আটা বিক্রি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ।
জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১.৫ মেট্রিক টন চাল ও ১ মেট্রিক টন আটা সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হয়।

কিন্তু ৭নং ওয়ার্ডে ডিলার সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকায় গত ১৪ দিন ধরে এই কার্যক্রম বন্ধ ছিল, যা ওএমএস নীতিমালা-২০২৪ এর পরিপন্থী। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত হলে পার্শ্ববর্তী ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি সচল রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, চাল ও আটার দাম যখন আকাশছোঁয়া, তখন সরকারের এই সহায়তা বন্ধ থাকায় তাদের কষ্টের সীমা ছিল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ১৪ দিন ধরে সরকারি চাল-আটা না পেয়ে আমাদের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে। বাজারে সবকিছুর যে দাম, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহমেদ জানান, ৭নং ওয়ার্ডের ডিলার সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকার কারণে বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, আমি ১৩ অক্টোবর থেকে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি।

২৫ অক্টোবর আমাদের একটি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নজরে আসেনি। পরে নীতিমালা অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে পার্শ্ববর্তী ডিলারের মাধ্যমে ৭নং ওয়ার্ডের বিক্রয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।

তবে, তার এই বক্তব্যে গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও নিয়োগ পরীক্ষার অজুহাতে ১৪ দিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রম বন্ধ রাখা তার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়।

এদিকে, মোহন আহমেদের নিজ জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের বদলি নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের কোনো পদে থাকা কর্মকর্তা নিজ জেলায় দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। মোহন আহমেদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কর্মরত থাকলেও তার স্থায়ী ঠিকানা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়।

এই নিয়মবহির্ভ‚ত পদায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের পদ্ধতি ও শর্ত অনুযায়ী, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে কাউকে পদায়ন করা হলে আমি এখান থেকে সরে যাবো।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আগামী চার মাসের মধ্যে রাজশাহী জেলায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রম (প্রোকিউরমেন্ট) সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যেই মোহন আহমেদ তার বদলি ঠেকানোর জন্য উচ্চপর্যায়ে তদবির করছেন।

এই পরিস্থিতিতে, রাজশাহীর ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ ওএমএস কার্যক্রমে দীঘসূত্রিতা, দায়িত্বহীনতা এবং নিয়মবহির্ভ‚ত পদায়নের এই ঘটনার দ্রæত তদন্ত ও সমাধান দাবি করেছেন।

তারা চান, ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি আর তৈরি না হয় এবং অসহায় মানুষের জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যেন কোনো কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০২:২৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
১৮

ওএমএস বিক্রি বন্ধ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে অসহায় মানুষের দীর্ঘশ্বাস

আপডেট: ০২:২৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মোঃ মাসুদ আলী পুলক,রাজশাহী থেকে:

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় টানা ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে রাজশাহী মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ডে সরকারের খোলাবাজার বিক্রয় (ওএমএস) কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।

এই দীর্ঘ সময় ধরে চাল ও আটা বিক্রি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ।
জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১.৫ মেট্রিক টন চাল ও ১ মেট্রিক টন আটা সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হয়।

কিন্তু ৭নং ওয়ার্ডে ডিলার সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকায় গত ১৪ দিন ধরে এই কার্যক্রম বন্ধ ছিল, যা ওএমএস নীতিমালা-২০২৪ এর পরিপন্থী। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত হলে পার্শ্ববর্তী ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি সচল রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, চাল ও আটার দাম যখন আকাশছোঁয়া, তখন সরকারের এই সহায়তা বন্ধ থাকায় তাদের কষ্টের সীমা ছিল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ১৪ দিন ধরে সরকারি চাল-আটা না পেয়ে আমাদের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে। বাজারে সবকিছুর যে দাম, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহমেদ জানান, ৭নং ওয়ার্ডের ডিলার সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকার কারণে বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, আমি ১৩ অক্টোবর থেকে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি।

২৫ অক্টোবর আমাদের একটি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নজরে আসেনি। পরে নীতিমালা অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে পার্শ্ববর্তী ডিলারের মাধ্যমে ৭নং ওয়ার্ডের বিক্রয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।

তবে, তার এই বক্তব্যে গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও নিয়োগ পরীক্ষার অজুহাতে ১৪ দিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রম বন্ধ রাখা তার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়।

এদিকে, মোহন আহমেদের নিজ জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের বদলি নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের কোনো পদে থাকা কর্মকর্তা নিজ জেলায় দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। মোহন আহমেদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কর্মরত থাকলেও তার স্থায়ী ঠিকানা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়।

এই নিয়মবহির্ভ‚ত পদায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের পদ্ধতি ও শর্ত অনুযায়ী, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে কাউকে পদায়ন করা হলে আমি এখান থেকে সরে যাবো।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আগামী চার মাসের মধ্যে রাজশাহী জেলায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রম (প্রোকিউরমেন্ট) সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যেই মোহন আহমেদ তার বদলি ঠেকানোর জন্য উচ্চপর্যায়ে তদবির করছেন।

এই পরিস্থিতিতে, রাজশাহীর ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ ওএমএস কার্যক্রমে দীঘসূত্রিতা, দায়িত্বহীনতা এবং নিয়মবহির্ভ‚ত পদায়নের এই ঘটনার দ্রæত তদন্ত ও সমাধান দাবি করেছেন।

তারা চান, ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি আর তৈরি না হয় এবং অসহায় মানুষের জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যেন কোনো কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়।