১০:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

এস আলম বিশ্বব্যাংকে সালিশি মামলা করেছেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক

এনামুল হক রাশেদী:

অবৈধভাবে সম্পদ বাজেয়াপ্তের অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গেলেন এস আলম ও তাঁর পরিবার

আন্তর্জাতিক সালিশি ব্যবস্থায় গেছেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি এস আলম ও তাঁর পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, অবৈধভাবে সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার তাঁদের শত কোটি ডলারের ক্ষতি করছে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর সোমবার ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি)-এ সালিশি আবেদন জমা দিয়েছে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বুধবার সকালে এ খবর প্রকাশ করে।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগঃ এস আলম পরিবারের দাবি, বাংলাদেশ সরকার তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, অযৌক্তিকভাবে ব্যাংক হিসাব জব্দ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত, ব্যবসায়িক লেনদেনে ভিত্তিহীন তদন্ত, এবং তাদের বিরুদ্ধে “প্ররোচনামূলক মিডিয়া অভিযান” চালানো।

তাঁরা বলেন, এসব পদক্ষেপের ফলে পরিবারটির শত কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, যদিও সুনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।

ড.ইউনূস সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জঃ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।

এই সালিশি মামলা এখন ইউনূস সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ সরকার দাবি করেছে, পূর্ববর্তী ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার পাচার হয়েছে। এই পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

আহসান এইচ মনসুরের অভিযোগঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর অভিযোগ করেছেন, এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তাঁর প্রশ্ন— “এই অর্থ কোথায় গেল?”

তিনি আরও বলেন, এস আলম ও তাঁর সহযোগীরা ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জালিয়াতি ও ঋণ কেলেঙ্কারি করেছেন। “আমাদের হাতে প্রচুর প্রমাণ আছে,” — বলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। “এসব ব্যাংকের অবস্থা করুণ। এগুলো বাঁচাতে সরকারকে বেইল আউট দিতে হয়েছে।”

সিঙ্গাপুরে বসবাস ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তিঃ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এই সালিশি মামলা করা হয়েছে।ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এস আলম পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ২০২১–২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।

তাঁদের দাবি, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তাঁদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়াঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, “যখনই আবেদন আমাদের হাতে আসবে, তখনই আমরা যথাযথভাবে উত্তর দেব।” তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

পূর্ববর্তী সতর্কবার্তাঃ গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে তাঁরা সালিশি আদালতে যাবেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেই পথেই হাঁটলেন।

এস আলম গ্রুপের প্রতিক্রিয়াঃ এস আলম গ্রুপ বরাবরই সরকারের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাঁরা বলেছে, গভর্নর আহসান মনসুরের উত্থাপিত অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১২:৩২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
৩৬

এস আলম বিশ্বব্যাংকে সালিশি মামলা করেছেন

আপডেট: ১২:৩২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

এনামুল হক রাশেদী:

অবৈধভাবে সম্পদ বাজেয়াপ্তের অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গেলেন এস আলম ও তাঁর পরিবার

আন্তর্জাতিক সালিশি ব্যবস্থায় গেছেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি এস আলম ও তাঁর পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, অবৈধভাবে সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার তাঁদের শত কোটি ডলারের ক্ষতি করছে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর সোমবার ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি)-এ সালিশি আবেদন জমা দিয়েছে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বুধবার সকালে এ খবর প্রকাশ করে।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগঃ এস আলম পরিবারের দাবি, বাংলাদেশ সরকার তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, অযৌক্তিকভাবে ব্যাংক হিসাব জব্দ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত, ব্যবসায়িক লেনদেনে ভিত্তিহীন তদন্ত, এবং তাদের বিরুদ্ধে “প্ররোচনামূলক মিডিয়া অভিযান” চালানো।

তাঁরা বলেন, এসব পদক্ষেপের ফলে পরিবারটির শত কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, যদিও সুনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।

ড.ইউনূস সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জঃ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।

এই সালিশি মামলা এখন ইউনূস সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ সরকার দাবি করেছে, পূর্ববর্তী ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার পাচার হয়েছে। এই পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

আহসান এইচ মনসুরের অভিযোগঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর অভিযোগ করেছেন, এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তাঁর প্রশ্ন— “এই অর্থ কোথায় গেল?”

তিনি আরও বলেন, এস আলম ও তাঁর সহযোগীরা ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জালিয়াতি ও ঋণ কেলেঙ্কারি করেছেন। “আমাদের হাতে প্রচুর প্রমাণ আছে,” — বলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। “এসব ব্যাংকের অবস্থা করুণ। এগুলো বাঁচাতে সরকারকে বেইল আউট দিতে হয়েছে।”

সিঙ্গাপুরে বসবাস ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তিঃ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এই সালিশি মামলা করা হয়েছে।ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এস আলম পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ২০২১–২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।

তাঁদের দাবি, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তাঁদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়াঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, “যখনই আবেদন আমাদের হাতে আসবে, তখনই আমরা যথাযথভাবে উত্তর দেব।” তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

পূর্ববর্তী সতর্কবার্তাঃ গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে তাঁরা সালিশি আদালতে যাবেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেই পথেই হাঁটলেন।

এস আলম গ্রুপের প্রতিক্রিয়াঃ এস আলম গ্রুপ বরাবরই সরকারের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাঁরা বলেছে, গভর্নর আহসান মনসুরের উত্থাপিত অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।