এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রাম থেকেঃ
“মানুষ মানুষের জন্য- জিবন জিবনের জন্য” উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী ভুপেন হাজারিকার কালজয়ী এই অমর সংগীতটি বাজলেই কেঁদে উঠে মানবিক মানুষদের হৃদয় মন। আমাদের সমাজের আপনার আমার চারপাশে জিবনের কঠিন সীমাবদ্ধতায় কত অসহায় মানুষের জিবনের নীরব আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে নিয়মিত, তা ক’জনেইবা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে! কিন্তু সত্যিকারের মানবিক হৃদয় নিয়ে জন্ম নেওয়া মানুষগুলোর হৃদয় ছোঁয়া অনুভব থেকে সেই অসহায় মানুষগুলো কখনো দূরে থাকতে পারেনা।
তেমনি একজন মহান হৃদয়ের নিরেট মানবিক মানুষ চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মিল্টন বিম্বাষ। যিনি সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের পর থেকে একজন প্রানচঞ্চল, কর্মচঞ্চল যোগ্যতম প্রশাসক হিসাবে নিজের দায়িত্ববোধ, দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা, আন্তরিকতার স্পষ্ঠ চাপ রাখার পাশাপাশি আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রেখে একটি জনপদের সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিকদের জিবনের মানোন্নয়ন এবং অসহায় মানুষদের নিয়মিত মানবিক সহযোগিতার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ের মনিকোটায় স্থান করে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই।
সদ্য সংঘঠিত বন্যায় ইউএনও মিল্টন বিশ্বাষ প্রতিকূল ও প্রাকৃতিক বৈরী পরিস্থিতিতেও মানবিক এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বৃষ্ঠি, বাতাস, প্লাবনকে উপেক্ষা করে দিনরাত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের তাৎক্ষনিক সহযোগীতায়, জয় করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয় মন।
উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের অলি আহামদ মাস্টার বাড়ির মৃত অলি আহামদ ও কোজেন্তা বেগমের কনিষ্ঠ কন্যা মেহেরুন্নেছা সুমি(৩৫) জন্মলগ্ন থেকে প্রতিবন্ধী, পায়ের জঠিলতায় জন্মের পর থেকে হাঁটতে পারেনি প্রতিবন্ধী মেহেরুন্নেছা।
সাবেক শিক্ষক পিতার সন্তান প্রতিবন্ধী হলেও বিবেকের স্বচ্ছতায় কখনো নিজের কঠিন প্রতিকূলতাকে সস্তাভাবে সমাজের যার তার কাঁছে পেশ করেনি সাহায্যের জন্য। প্রখর মেধাবী, বুদ্ধিমতী, রুচিবোধ ও আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মেহেরুন্নেছা তার জিবনের কঠিন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতাকে জয় করার জন্য নির্ভর করেছে পরম দয়ালু সৃষ্ঠিকর্তার উপর। প্রতিবন্ধী মেহেরুন্নেছা নিজের বুদ্ধীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম্বারে কল করে একটি হুইলচেয়ার চায়।
হুইলচেয়ার চেয়ে মেহেরুন্নেছার কল পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানবিক মানুষ মিল্টন বিশ্বাষ তাঁর চিরাচরিত নিয়মেই তাৎক্ষনিকভাবে বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তকে তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য বলেন। পরবর্তীতে বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী মেহেরুন্নেছার জন্য একটি হুইলচেয়ার ক্রয় করে ১৮ সেপ্টেম্বর’২৩ ইং সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস সুমির বাড়িতে গিয়ে নিজেই মেহেরুন্নেছাকে হুইলচেয়ার টি বুঝিয়ে দেন। এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপি সচিব খসরু সিকদার, ইউপি সদস্য সৈয়দ আহমদ।
হুইল চেয়ারটি পাওয়ার পর মেহেরুন্নেছার অনুভুতি জানতে চাইলে সেলফোনে মেহেরুন্নেছা যা বললেন,- ” হুইল চেয়ারটি নিঃসন্দেহে আমার দৈনন্দিন চলাফেরায় অনেক গুরুত্বপুর্ন ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, এটি আমার জন্য খুব প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আর্থিক সংকটে সেটা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি আগে। আমি হুইল চেয়ারটি পাওয়ার পর নিজের উপকারের কথা ভেবে যতটুকু না খুশি হয়েছি, তার ছেয়ে বিস্ময়ে আবেগাপ্লুত হয়েছে, আমাদের সমাজে ইউএনও স্যারের মত সত্যিকারের সানবিক মানুষরা আছে বলেই এখনো আমাদের সমাজ এত সুন্দর।
ইউএনও স্যারের মত মহানুভব মানবিক মানুষরা দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকুক সমাজের অসহায় মানুষদের কল্যানে।” মেহেরুন্নেছা হুইল চেয়ার প্রদানের জন্য ইউএনও মিল্টন বিশ্বাষ ও ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।