বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলীতে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার ছেলের নেতৃত্বে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে কাউন্টারের টিকেটম্যান, যাত্রীসহ প্রায় ১০জন। পরে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি ভাংচুরসহ হামলাকারীরা কাউন্টারে থাকা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। ওই বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাত ৭টার দিকে আমতলী পৌরসভার নতুন বাজার বটতলা নামক এলাকায় দূরপাল্লার পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত দূরপাল্লার পরিবহন বাসের ১০ থেকে ১২টি কাউন্টারে দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোটা নিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক দুর্বৃত্ত ওই হামলায় অংশ নেয়। এতে রয়েল পরিবহন কাউন্টার ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম রিপন, রাজিব পরিবহন কাউন্টারম্যান কায়েস, শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের টিকেটম্যান মোঃ নাজমুল হোসেন, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জনি গাজী, সংবাদকর্মী এইচএম রাসেলসহ ৬জন অজ্ঞাত যাত্রী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে কায়েস, জনি গাজী, সংবাদকর্মী এইচএম রাসেলকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। বাকীরা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের টিকেটম্যান মোঃ নাজমুল বলেন, আমি যাত্রীদের টিকেট দিচ্ছিলাম। এমন সময় এক থেকে দেড়শতাধিক লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আমার কাউন্টারে ঢুকলে আমি ভয়ে সরে যাই। তারা আমার কাউন্টারে থাকা দুটি ল্যাপটপ, একটা প্রিন্টার, একটি কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরাসহ আমার টিকেট বিক্রির প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাদের চেয়ার টেবিলসব ভেঙে বাইরে ফেলে দিয়ে। তাদের দুটি টেবিল ভিতরে রেখে কাউন্টারের বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যায়।
সৌদিয়া পরিবহণের আমতলী কাউন্টার ম্যানেজার সফিউল বাশার লালন বলেন, বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরের ছেলে একাধিক মামলার আসামী রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বেশ কয়েকটি কাউন্টারে হামলা চালায়। হামলাকারীরা আমার কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ২৭ হাজার টাকা এবং ১টি ল্যাপটপ, পিন্টার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়া কাউন্টারের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র ভেঙে কাউন্টারে তালা মেরে চলে যায়। পরে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা এসে তালা খুলে দেয়।
লাবিবা পরিবহন কাউন্টার ইনচার্জ মোঃ রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা দূরপাল্লার কাউন্টারে হামলা ও ভাংচুর চালায়। তখন পুলিশ দর্শকের মত দাঁড়িয়েছিল।
সেবা গ্রীনলাইন কাউন্টার ইনচার্জ ও মামলার বাদী আরিফ বলেন, আমি আমার কাউন্টারে বসে টিকিট কাটছিলাম। হঠাৎ রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যুবদলের মামুন, রাজ্জাক, জামাল বিহারী, সবুজসহ প্রায় দের শতাধিক দুর্বৃত্ত লাঠি সোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের দূরপাল্লার কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে আমতলী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আমার মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ তুহিন মৃধা বলেন, বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরের ছেলে রাহাত ফকির একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর টাকা হাইজ্যাক, ছিনতাই, ডাকাতি মামলাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তার নেতৃত্বেই সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দূরপাল্লার কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে ওই রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্নস্থানে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে আসছে। সকল ঘটনার সাথে রাহাত ফকির সরাসরি জড়িত থাকলেও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দিনদিন সে বেপরোয়া হয়ে উঠছে, এতে আমাদের দলেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দ্রæত তাকে গ্রেফতারের দাবী জানাই।
ওই বিষয়ে জানতে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরের ছেলে রাহাত ফকিরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) মো. রুহুল আমিন বলেন, দূরপাল্লার পরিবহণ কাউন্টারে হামলার খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ওই বিষয়ে কেহ মামলা করতে থানায় আসেননি। আর থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয়।