এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট ইস্যুঃ গন্ডামারা ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জনতার মানববন্ধন
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত ১৩২০ মেঃ ওঃ বেসরকারী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণকালীন সময়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গন্ডামারা ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ড্রেনেজ সিস্টেমের সংস্কার, স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত ও পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নের দাবিতে উপজেলার “৯ নং গন্ডামারা ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতা”র-এর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৫ নভেম্বর, শুক্রবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে ছাত্র আমিনুর রশিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন ছাত্র আবদুল মান্নান, আমিনুর রশিদ, হাসান নূর, মোহাঃ ছরওয়ার, মোজাহিদুল ইসলাম, জাহেদ মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন, জয়নাল আবেদনীন প্রমুখঃ।
এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের দাবী জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, “ পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার পুর্বে এস আলম কোম্পানীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা আমাদের এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন চাই। এসএস পাওয়ারের কাছ থেকে আমরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার আশা করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় যুবকরা সেখানে কাজ পাচ্ছে না। আমাদের এ বঞ্চনা দূর করতে হবে।”
৬ দফা দাবির বিষয়ে আমিনুর রশিদ বলেন, “স্থানীয়দের অধিকার রক্ষায় আমাদের ৬ দফা দাবি রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ, যোগ্যতাভিত্তিক কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, ড্রেনেজ ও সড়কব্যবস্থা সংস্কার অন্যতম। এসএস পাওয়ার কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে এসব দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।
কৃষি জমি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে হাসান নূর বলেন, “প্রকল্প নির্মাণকালে আমাদের উর্বর কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে। এই জমি পুনরুদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এসব জমি পুনরায় চাষযোগ্য করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে ছরওয়ার বলেন, “গন্ডামারার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সড়কগুলো সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো ফল হয়নি। গন্ডামারা ইউনিয়নের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ অভ্যন্তরিন সড়ক ও রাস্তাগুলো কাংখিত উন্নয়নে আমরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চাই।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে মোজাহিদ বলেন, “এসএস পাওয়ার প্রকল্পের কারণে গন্ডামারার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাই পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
স্থানীয় অধিকার রক্ষার বিষয়ে জাহেদ মাহমুদ বলেন, “গন্ডামারার মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত না করা অন্যায়। এটা এস আলম কোম্পানীর প্রতিশ্রুতিরও বরখেলাপ এবং চরম বৈষম্য। এই বৈষম্য অবিলম্বে বন্ধ করে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরীতে নিয়োগ নিশ্চিতের ঘোষনা দিতেই হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বোরহান বলেন, “এসএস পাওয়ার প্রকল্পের প্রভাবে জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গন্ডামারা এলাকার জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে জয়নাল আবেদীন বলেন, “গন্ডামারায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবনতির কারণে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্ষার সময় পুরো এলাকা পানিতে ডুবে থাকার ফলে কৃষির সমুহ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। দ্রুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা না হলে আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। তাই অবিলম্বে ইউনিয়নের অভ্যন্তরে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার পুর্বক উন্নতি করতে হবে।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রভাবে স্থানীয়রা যেমন এলাকার উন্নতির আশা করেছিল, প্রকল্প কতৃপক্ষের অবহেলা, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতায় বাস্তবে এলাকাবাসী ঠিক তার বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল হতে হবে।
মানববন্ধনে গন্ডামারা ইউনিয়নের মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, অন্যতায় ভবিষ্যতে ছাত্র জনতার ব্যানারে কঠোর কর্মসুচীর হুংকার প্রদান করেন।
মানববন্ধনে ৯ নং গন্ডামারা ইউনিয়ন ছাত্র জনতা এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট কতৃপক্ষের কাছে — দফা দাবী জানান এবং তা বাস্তবায়নে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দাবীগুলো হচ্ছেঃ
দাবী-১: অনতিবিলম্বে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
দাবী-২: ০৬ মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
দাবী-৩: জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত সময়ে ড্রেনেজ সিস্টেমের সংস্কার করতে হবে।
দাবী-৪: পরিবেশ সংরক্ষণের টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
দাবী-৫: শতভাগ বিদ্যুতায়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
দাবী-৬: উপকূলের যত্রতত্র প্রকল্পের পণ্যবাহী জাহাজ নোঙ্গর বন্ধ করতে হবে।