শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে:
শীত মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহে গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি টাঙানোর কাজে ব্যস্ত থাকার কথা গাছিদের। কিন্তু এবার শীত শেষে বসন্ত চলে এলেও ডুমুরিয়ায় দেখা মেলেনি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর রস। গাছির অভাব আর গাছ কেটে সাবাড় করায় খেজুর রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিপুল চাহিদা থাকলেও মিলছে না খেজুরের গুড়।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, এখনো বিভিন্ন এলাকায় অনেক খেজুরগাছ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো মরে যাচ্ছে। সঙ্গে গাছির অভাবে রস সংগ্রহ করতে পারেন না গাছের মালিকেরা। এ ছাড়া এখন যেসব গাছ আছে, তাতেও পর্যাপ্ত রস মিলছে না।
ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামের সাজিয়াড়া শামছুল উলুম মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা মোস্তাক আহমেদ ও ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সরদার আবু সাঈদ আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা যহন টগবগে যুবক ছিলাম, তখন শীতের সকাল খেজুরের রস ছাড়া জমত না। সকালবেলার ঠান্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেন অমৃত। আর এহন সেই গাছ থেকে খেজুর রস নামানো দুষ্কর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলা আশ্বিন মাস থেকে সাধারণত রস সংগ্রহ শুরু হয়। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। কিন্তু এবার তীব্র শীতের সময়েও আগের মতো দেখা মেলেনি রসের।
সাজিয়াড়া শামছুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল গাফফার বলেন, ‘শীতের সকালে গাছিদের কাঁধে করে হাঁড়ি ভরা রস নিয়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য গ্রামীণ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট কারণেই এখন আর আগের সেই ঐতিহ্য নেই।’ এ জন্য তিনি যত্রতত্র ইটভাটাকে দায়ী করেন।
এদিকে উপজেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে কয়েকটি খেজুরগাছের। কয়েকজন মালিক বলেন, খেজুর রস পাওয়ার পরিমাণ গাছ ছিলার কৌশল ও যত্নের ওপর নির্ভর করে। এখন গাছিরা খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে সংসার চালাতে পারছেন না। তাই এতে তাঁদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।
উপজেলার গুড় ব্যবসায়ী বিশ্ব বলেন, খেজুর রসের গুড় আগের মতো পাওয়া যায় না। এখন পাটালি গুড় বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতারা পাটালি গুড় দিয়েই শীতকালীন নানান পিঠা খেতে পছন্দ করেন।