এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা):
বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন এ আয়োজন চোখে পড়ার মত। অবশ্য এখন শখের বসে রাজধানী ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে এ সব বাগান দেখা যায়। শখের বসে বাড়ি মালিক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু পরিচর্যা আর সঠিক পদ্ধতির না জানার কারণে বিভিন্ন ছাদে তাদের বাগান গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে তোলা হলে বাড়ির ছাদে যেকোন গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। এসব বাগান করে সফলতাও পাচ্ছেন অনেকে। শখ থেকে হয়ে উঠছে বানিজ্যিক চিন্তাধারাও।
এমন একজন শখের বসে ছাদ বাগান করে সফলতা পেয়েছেন খুলনার পাইকগাছার উপজেলার সফল প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন। তিনি তার নিজ বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে বিভিন্ন প্রকারের ফল, ঔষধীগাছ, সবজি ও ফুলের চাষ করেছেন। তার ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষক খালেদা খাতুন পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের ২৬ নং মানিকতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্বামী এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি হিসাবে দৈনিক যায়যায়দিন, daily observer ও দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকায় কর্মরত রয়েছেন।
খালেদা খাতুন পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বাগান করার প্রতি তার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়ে বাগান পরিচর্যার কাজ করেন নিজেই। ছোট বেলায় বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ যেখানে জায়গা পেতেন সেখানেই তিনি বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা রোপন করতেন। ছোট বেলার শখ থেকেই মুলত আগ্রহ তার। শিক্ষক জীবনে তিনি যেমন সফলতা পেয়েছেন তেমনই তিনি ছাদ বাগান করে একটি মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
গত ১৯৯৭ সালের ২৯ জুন থেকে অদ্যবধি পৌর সদরের বান্দিকাটি গ্রামে খালেদা খাতুন তার পরিবারকে নিয়ে এক সঙ্গে জীবনযাপন করেন। নিজ বসতবাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে দু একটা গাছ লাগিয়ে বাগান করা শুরু করেন। বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদকে এখন তিনি জীবন্ত বাগানে পরিণত করেছেন। ছাদের কোথাও তিনি লাগিয়েছেন কমলা, মাল্টা, আপেল, কদবেল, বেদানা, লিচু, আমলকি, সিডলেস কাগুজী লেবু ও চায়না কাগুজী লেবু, ড্রাগন, আপেল,আজোয়া সৌদি খেজুর,বারোমাসি আমড়া,বল সুন্দরী কুল, চায়না পেয়ারা সহ বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ। লাগিয়েছেন পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন,করেল্লা, শসা, কাকুড়, ঢেঁড়স,লাল শাক, পালংশাক, মুলা, ওল কপি, লাউ, সীম ও কয়েকটি প্রজাতির মরিচ সহ অনেক ধরণের সবজি, আবার কোথাও লাগিয়েছেন দোপাটি, রঙ্গন, জুঁই, হাসনাহেনা, গোলাপ, জবা, গাঁধা, রজনীগন্ধা, লজ্জ্বাবতী, ক্যকটাস, বনসাই বটগাছ, নীল অপারজিতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ।
ছাদের কোন অংশে আবার লাগিয়েছেন পাথর কুঁচি, কাল মেঘা, তুলসী, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রক গাছ সহ বিভিন্ন ধরণের ঔষধী গাছ। সবজি, ফল আর ফুলে ভরে গেছে ছাদের সমস্ত অংশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন ছাদ, নাকি সবুজ ফসলের মাঠ। সব ধরণের সবজি ও ফল কীটনাশক ব্যবহার না করেই শুধুমাত্র জৈবসার ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন শিক্ষক খালেদা খাতুন।
উৎপাদিত সবজি ও ফল নিজের পরিবারের চাহিদা পুরণ করে অতিরিক্ত ফল ও সবজি আত্মীয় স্বজনের মাঝে বন্টন করেন বলেও তিনি জানান। খালেদা খাতুন শিক্ষকতা ও স্কুল, কলেজ পড়ুয়া তিন ছেলে মেয়ের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যবহার করেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষক খালেদা খাতুন জানান, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে করোনাকালীন আমার বিদ্যালয়ে ছুটি পড়ায় ওই সময় থেকে অনেক গাছ লাগিয়ে ছাদবাগান গড়ে তুলি। ছোট বেলা থেকেই বাগান করা আমার শখ। আমার বাড়ীর সাথে তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে বাগান করা শুরু করি। প্রতিদিন ভোর ৫টার দিকে এবং স্কুল থেকে ফিরে বিকালে এক দেড় ঘন্টা করে বাগানের পরিচর্যার কাজ করি।
গত ৩/৪ বছরের ব্যবধানে ছাদ ছেয়ে গেছে সবজি ও ফল-মূলে। আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অনেক সবজি ও ফলমূল অতিরিক্ত থেকে যায়। প্রতিদিন লোকজন যখন আমার বাগান দেখতে আসে তখন একদিকে খুব ভালো লাগে। তিনি বলেন, অত্র এলাকায় ছাদ বাগান করে আমিই মনে হয় সফল হয়েছি।
ভবিষ্যতে ছাদে ড্রেনেজ সিষ্টেম ও বাড়ির সামনে বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে শিক্ষক খালেদা জানান। খালেদা খাতুনের ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এ ধরণের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি খালেদা খাতুনের ন্যায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ছাদে বাগান করার মত নানন্দিক পারিবারিক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। এতে নিজে ও তার পরিবার সহ সমাজ উপকৃত হবে।