শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে:
এক সময় গ্রামের কৃষক আদা চাষ করতো বাড়ীর পাশের উঁচু জমিতে। আদা চাষের জমিতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করা হতো। আদা চাষের জন্য জমিকে উর্বর করে তুলতে গোবর সার ও চুলার ছাই দিয়ে হালচাষ করা হতো।
এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেলে মার্চ-এপ্রিল মাসে আদার বীজ বুনতো কৃষক। সেই আদা চাষাবাদে কৃষকের পরিশ্রম হতো অনেক। বীজ থেকে অঙ্কুর বের হলে কৃষক আদার জমিতে কোদাল দিয়ে অঙ্কুরিত গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে একটু উঁচু করা হতো এবং পার্শ্ববর্তী জায়গা দিয়ে পানি বের করার জন্য ছোট ছোট নালা (ধর) করা হয়। বর্ষাকালে আকাশের পানি হলে সেই ছোট নালা (ধর) দিয়ে পানি বের হয়ে যেতো।
আবার অধিক পরিমানে বৃষ্টি হলে চাষবাদকৃত আদায় পচন (মড়ক) শুরু হয়। ফলে কৃষকের স্বপ্ন ভেস্তে যেতেহ বসে। আদা জমিতে লাগানোর পর থেকে প্রায় ৯-১০ মাস পর জমি থেকে আদা উত্তোলন করা হয়। কিন্ত অধিক বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে থাকার ফলে আদার পচন শুরু হওয়ার ফলে কীটনাশক ব্যবহার করেও সেই আদা ক্ষেত অনেক সময় রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এতে কৃষকের আবাদী ফসলে লাভের তুলনায় লোকসান গুনতে হয়।
এক পর্যায়ে কৃষক আদা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যান্য ফসল চাষাবাদে মনোযোগী হয়। কৃষকের কথা মাথায় রেখে, আদার পঁচন রোধে এবং আদা চাষ সম্প্রসারণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে “গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প (জিকেবিএসপি)” এর আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ডুমুরিয়ার সহযোগীতায় উচু জমিতে বস্তায় আদা চাষা করে লাভবান হওয়া যায় এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিকেবিএসপি প্রকল্পের আওতায় ০৪ টি প্রদর্শনী দেয়া হয় যেখানে প্রত্যেকে ৩৫০ টি বস্তায় আদা চাষ করেছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে একদিকে যেমন চাষাবাদ খরচও কম অন্যদিকে উৎপাদনও বেশি, কৃষক হচ্ছে লাভবান। একটি বস্তা ব্যবহার করা যাচ্ছে একের অধিক বার।
তাদের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অত্র উপজেলার আরও ২০-২৫ জন কৃষককে প্রায় ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করার জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক এ আদাচাষ পদ্ধতির বিষয়ে কৃষিবিভাগ সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ওই সকল আদা চাষির প্রদর্শনী দেখে নিয়মিত পরামর্শ দেন।
উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামের মো জাহাঙ্গীর আলম সরদার প্রথমে মোবাইল ফোনে ইউটিউব দেখে আদা চাষাবাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেন এবং উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ গ্রহন করেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ দিয়ে আদা চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। পরামর্শ গ্রহনের পর বাড়ীর পিছনে পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন।
আদা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসাবে আদার বস্তার ফাঁকে ফাঁকে করলা,বরবটি গাছ লাগিয়ে সবজি চাষ করছেন। বাড়ীর পাশে পরিত্যক্তা জমিতে বস্তায় আদা লাগিয়ে চলছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। অপর দিকে অনন্যারা লিচু বাগানের নিচে পতিত জমিতে ৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন,আমি আমার ব্লকে বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনীতে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে পরামর্শ দিয়ে আসি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন,উপজেলায় এ বছরে প্রায় দেড় হাজার (১৫০০) বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। প্রত্যেক আদা চাষির প্রদর্শনীতে গিয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বস্তায় আদা গাছের বাড়-বাড়তি চোখে পড়ার মত।আশা করি প্রতিটি বস্তায় ফলন হবে চমৎকার। অনেক কৃষক বস্তায় আদা চাষ করা দেখে এখন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।