মাইনুল ইসলাম রাজু, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
আমতলীর গাজীপুর খালের উপর সোয়া চারকোটি টাকার ১৯ মাসের সেতুর কাজ ৫ বছর ধরে ফেলে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের অধিকাংশ টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। কাজ বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া নেই ঠিকাদারের। অসমাপ্ত অবস্থায় সেতুর কাজ এভাবে বছরের পর বছর পরে থাকায় ভোগান্তি পরেছে এলাকাবাসী।
আমতলী উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজার সংলগ্ন গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার পূর্ব পাশে গাজীপুর খালের উপর ২০১৯ সালে ৪ কোটি ২৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৬৮ টাকা ব্যায়ে ৪৮ মিটার দৈঘর্য ও সাড়ে ৭ মিটার প্রস্থের একটি গর্ডার সেতু নির্মানের দরপত্র আহবান করে এলজিইডি কার্যালয়।
সর্ব নিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় পটুয়াখালীর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি কাজটি বিক্রি করেন পটুয়াখালীর আরেক ঠিকাদার তানভির আহম্মেদ দিপু নামের একজনের নিকট। কাজটির নির্মান সময় ধরা হয় ১লা জানুয়ারি ২০১৯ সাল থেকে ২৯ সেপ্টম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত।
১৯ মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার গাফিলতি করে ৫ বছরেও শেষ করেনি সেতু নির্মান কাজ। কাজটির ধীর গতির কারনে এ পর্যন্ত দুথদফা সময় বাড়িয়েছেন। সর্বশেষ গত জুন ২০২৪ সালে শেষ করার কথা। এর পর তিনি আর সময় না বাড়িয়ে কাজটি ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছেন।
কাজটি ফেলে রাখায় বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ১৫ সেপ্টম্বর ঠিকাদারকে কারন দর্শাও নোটিশ প্রদান করা হয়। এবং নোটিশে ৭দিনের সময় বেঁধে দিয়ে কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়। কাজ শুরু করা না হলে কার্যাদেশ বাতিল বলে গন্য করা হবে। কিন্তু এ চিঠি প্রদানের সময় অতিবাহিত হলেও ঠিকাদার কোন সাড়া দেয়নি।
অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার দুই পাড়ের এপার্টমেন্টাল, দুটি পিয়ার ও ১টি শ্লাবের কাজ করে বরাদ্ধের অধিকাংশ ২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৮ টাকা তুলে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সেতু নির্মানে ব্যাপক পরিমান দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সেতুতে নিম্ন মানের খোয়া, রড এবং পরিমানের চেয়ে কম সিমেন্ট ব্যাহার করা হয়েছে। গাজীপুর খালের পূর্বপাড়ে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম সোনাখালী গ্রাম। পশ্চিম পাড়ে গজীপুর গ্রাম।
পশ্চিপাড়ে সেতু নির্মান স্থলের মাত্র ২০ ফুট দরত্বে গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা। পূর্বপাড় থেকে প্রতিদিন আড়াইশথ শিক্ষার্থী গাজীপুর বন্ধর ঘুরে মাদরাসায় আসে। সেতুর নির্মান কাজ শুরুর আগে এখানে একটি লোহার সেতু ছিল। নতুন সেতু নির্মানের সময় ওই সেতুটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের আড়াই থেকে ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে অনেক কষ্ট হয়। কষ্টের কারনে অনেক শিক্ষার্থী এখন আর নিমিয়ত মাদরাসায় আসেন না।
মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাম্মি আকতার বলেন, নতুন সেতুর কাজ শুরু করে ফেলে রাখা হয়েছে। তাই আমাদের অনেক পথ ঘুরে মাদরাসায় আসতে হয় এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। কষ্টের কারনে শিক্ষার্থী প্রতিদিন মাদরাসায় না আসায় লেখা পড়ায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন সেতু নির্মানের জন্য পুরাতন লোহার সেতুটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখন নতুন সেতুর নির্মান কাজও ৫ বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। এতে মাদরাসায় অনেক শিক্ষার্থী আসা কমে গেছে। দ্রুত সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করার জন্য দাবী জানাই।
সাব ঠিকাদার তানভির আহম্মেদ দীপু বলেন, আমি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি আশা করি ২-৩ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করবো। কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয় তিনি অস্বীকার করে বলেন যথাযথ ভাবে কাজ করা হচ্ছে।
মূল ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজটি চুক্তি করে অন্য এক ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি কেন এখনো কাজটি সম্মন্ন করেননি তা তিনি জানেন না।
আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রস আলী বলেন, সেতুর কাজ ফেলে রাখায় ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়েছে। এবং কাজ বাতিলের জন্য বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করা হয়েছে।
বরগুনার নির্বাহী প্রেকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, সেতুর কাজ না করে ফেলে রাখায় ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার কোন সাড়া না পাওয়ায় তার কার্যদেশ বাতিল কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। টাকা বেশী নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়েছে। কাজের চেয়ে বেশী টাকা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।