• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
বেনাপোলের সন্তান ইমন হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক নান্দনিক আয়োজনে ‘বাংলা কবিতাঙ্গন’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গুনিজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত সেনবাগে ২৪ বোতল পরিত্যক্ত বিদেশী মদ উদ্ধার র‌্যাব-৭ এর হাতে গ্রেফতার হল ফেনীর কিশোর গ্যাং “সোয়াগ-৪৭” তীব্র গরম ও তাপদাহে অতিষ্ঠ সোনাতলাবাসী বাড়ছে নানা রোগ নোয়াখালীতে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ আদায় চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে সর্বস্তরের সাংবাদিকদের মানববন্ধন বগুড়ায় ১৮দিনেও সন্ধান মিলেনি পলি রানীর থানায় জিডি মধুপুরে জৈব কৃষি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত তীব্র গরম ও তাপদাহে অতিষ্ঠ মধুপুরবাসী বাড়ছে নানা রোগ

শিশুর মত আকৃতি দমাতে পারেনি ৩ ফুট ১০ ইঞ্চির সোনিয়াকে

News Desk
আপডেটঃ : রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

মোঃ ফখর উদ্দিন, নোয়াখালী প্রতিনিধি:

কিছু দুঃখ মানুষকে হতাশায় তলিয়ে দেয়। শারীরিক বাধা এমনি এক কষ্ট। আবার এমন প্রতিবন্ধকতাই কারও জীবনে শক্তি হয়ে অনুপ্রেরণা দেয়। এমনি এক শিক্ষার্থী নোয়াখালীর কবিরহাট সরকারি কলেজের জান্নাতুল ফেরদাউস সোনিয়া। পড়ছেন দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে।সোনিয়া দেখতে শিশুর মত হলেও তার বয়স (২১)।লম্বায় তিন ফুট ১০ ইঞ্চি। বয়স বাড়লেও তার শারীরিক গঠন বাড়েনি।

শরীরের গঠন শিশুদের মতো দেখায়। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সোনিয়া।ছোটবেলা থেকেই সে পড়াশোনায় বেশ আগ্রহী ছিল। ২০১৬ সালের ঘটনা। ছোট বোন জান্নাতুল নাঈমের সাথে স্থানীয় রাজুরগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখন পঞ্চম শ্রেণি ছাত্রী সোনিয়া। যখন ছোট বোনের শারীরিক গঠন বাড়তে থাকে, তখনই তার শারীরিক অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। এরপর শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটে তাকে পড়তে হতো কটু কথার বেড়াজালে। রাস্তাঘাটে হয়রানির বিরুদ্ধে তার লড়াই ছিল ব্যতিক্রমী।সে মানুষের কোনো উপহাস বা টিপ্পনি কখনোই কানে লাগাননি।

কোনো কটু কথা তাকে দমাতে পারেনি। সোনিয়া নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের সগির ফাইক গ্রামের জমিদার বাড়ির নুরুল হকের মেয়ে। এভাবে বাড়ির পাশের প্রাথমিকের গন্ডি শেষ করে ২০২২ সালে স্থানীয় মিয়ার হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩.৫৬ পেয়ে এসএসসি পাস করেন।

এরপর কলেজে ভর্তি হতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান মা রহিমা খাতুন।একাধারে তিনদিন কান্নার পর মেয়ের প্রবল ইচ্ছার কাছে হার মানেন মা। দিনমজুর বাবার একান্ত সহযোগিতায় কলেজে ভর্তি হন সোনিয়া। এখন বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কলেজে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বপ্ন দেখেন প্রতিবন্ধকতাকে ছিন্ন করে একজন ব্যাংকার হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্ত দিনমজুর বাবা পরপর দু’বার হার্ট অ্যাটাক করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সোনিয়ার উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে।

জান্নাতুল ফেরদাউস সোনিয়া বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর,পরিবারে ছিল আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য। বাবা পররপর দু’বার স্ট্রোক করার কারণে পরিবারে অভাব অনটন দেখা দেয়। এতে আমার পড়ালেখার খচর এখন বহনকরা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে একজন ব্যাংকার হওয়া। আমি চাই সরকার ও সমাজের বিত্তবান মানুষ আমার পাশে দাঁড়াক।মা রহিমা খাতুন বলেন,আমার বড় কোনো ছেলে নেই।

আমার মেয়ে যেন তার পড়া লেখা আরেকটু চালিয়ে যেতে পারে।সরকার ও বিত্তবান মানুষের সহযোগিতায় আমার মেয়ে যেন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। মামা জাকির হোসাইন বলেন, সোনিয়া আমার বড় বোনের মেয়ে।

সে ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছে। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তার লেখা পড়া এ পর্যন্ত এসে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

কবিরহাট সরকারি কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ নূরুল হক মিলন বলেন, নোয়াখালীর কবিরহাট সরকারি কলেজে সোনিয়া আমাদের একজন নিয়মিত ছাত্রী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে একটুকু পড়াশোনা করে আসছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা অনুকরণীয় বিষয়।

কবিরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, এ অবস্থায় সোনিয়ার যে উদ্যম,তা কলেজের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। তার উচ্চ শিক্ষার সুবিধার জন্য যদি সম্ভব হয় আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও সর্বাত্মক সাহায্য করার চেষ্টা করব। একই সাথে আমি আহ্বান জানাই সমাজের হৃদয়বান,বিত্তবান মানুষ যেন তার পাশে দাঁড়ায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ