এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রাম থেকেঃ
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার তৃণমুল পর্যায়ের প্রস্তুতি হচ্ছে জেলাভিত্তিক স্মার্ট প্রকল্প। জেলাভিত্তিক উদ্ভাবনী চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর আওতায় জাতীয়ভাবে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ নামক উদ্ভাবনী প্রকল্প। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনকৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ১০টি স্মার্ট স্কুল বাস ২৭ নভেম্বর’২৩ ইং থেকে স্কুল ছাত্রদের বহন করতে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে।
চট্টগ্রাম নগরীর যেকোন জায়গা থেকে মাত্র পাঁচ টাকায় ‘স্মার্ট স্কুল বাসে’ চড়ে যথাসময়ে স্কুলে যেতে পারবে ছাত্র ছাত্রীরা। স্মার্ট স্কুল বাস চালুর মাধ্যমে মুলতঃ চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্ট জেলা’র কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
২৩ নভেম্বর’২৩ ইং বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ প্রকল্পটির অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিষদ আলোচনা পূর্বক সর্বসম্মতিক্রমে ‘স্মার্ট স্কুল বাস’- এর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বাস পরিচালনার মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাসে যুগোপযোগী সেবার মান বৃদ্ধির সুবিধার্থে ভবিষ্যতে ভাড়া বাড়ানোরও প্রস্তাব দেন। প্রাথমিকভাবে ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারন করা হলেও পরবর্তি বছর থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে রাখা হয়।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ উদ্ভাবনী উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৮০ লাখ টাকা উপহার দিয়েছেন, যদিও এ টাকা বাস কেনার জন্য না। স্মার্ট স্কুল বাস চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সময়ের অপচয় রোধ, যানজটের ভোগান্তি থেকে মু্ক্তি, অভিভাবকদের ভোগান্তি ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি, অধিক যাতায়াত খরচ, সড়ক দুর্ঘটনার দুঃশ্চিন্তা থেকে রেহাই, অভিভাবকদের কর্মঘণ্টার সাশ্রয় সহ বিভিন্ন সমস্যার আশু সমাধান হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে ১০টি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি দোতলা বাস নগরের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে স্মার্ট স্কুল বাস অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে। সভায় উপস্থিত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক আবুল মোমেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় বের হয় তখন অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায় থাকেন। ছেলে-মেয়েরা যথাসময়ে ও নিরাপদে স্কুলে পৌঁছেছে কি-না অথবা আদৌ স্কুলে গেছে কিনা, সে টেনশনে অস্থির সময় অতিবাহিত করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের স্মার্ট স্কুল বাস উদ্যোগটির কারণে এখন সে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা আর টেনশন থাকবেনা। আগের মত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদেরকে তাদের কর্মঘন্টা ও সময় নষ্ঠ করে তাদের বাচ্ছাদের সাথে স্কুলে আসতে হবেনা এবং স্কুল ছুঠি হওয়া পর্যন্ত সাথে করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলের সামনে বসে থেকে অপেক্ষা করতে হবেনা। স্মার্ট স্কুল বাস’ই নিরাপদে শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসবে স্কুল ছুটি হয়ে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেবে। আগে অনেক ছাত্র ছাত্রী তাদের পারিবারির প্রাইভেট গাড়ীতে স্কুলে আসা-যাওয়া করত বিধায় প্রাইভেট গাড়ীর আধিক্যে স্কুল গেইটের সামনে এবং দুপাশের রাস্তায় প্রতিনিয়তই দির্ঘসময় ধরে যানজটের সৃষ্ঠি হত। এখন সে যন্ত্রনা থেকেও সাধারন জনগনের মুক্তি মিলবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব ও চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল আলীম সময় বাঁচিয়ে কম টাকায় গতিশীল জীবন পরিচালনা করতে স্মার্ট স্কুল বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রাশেদ মোস্তফা স্মার্ট স্কুল বাসের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা ও আইডিয়া ব্যাখ্যা করেন।
স্মার্ট স্কুল বাস মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক মিনহাজুল ইসলাম নগরীর পতেঙ্গা, হালি শহর ও বন্দর এলাকায় আরও ১০ টি স্কুল বাস চলাচলের দাবি জানান।
সমন্বয় সভায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাদি উর রহিম ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।