এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রাম থেকেঃ
“ফ্রিজে পানির বোতল রাখনি কেন বলেই হুজুর দুই হাতে এতিম শিশু ছাত্রকে খামছে ধরে মাথার উপর তুলে সজোরে মারলেন ফ্লোরে আছাড়। কিছুক্ষনের জন্য জ্ঞান হারাল শিশু সাকিব। পরে মেডিকেল টেস্টে ধরা পড়ল তার পা ভেঙ্গে গেছে।”
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার এক কোরআন হিফজ খানার এক এতিম শিশু ছাত্র হুজুরের নির্দেশ ভুলে গিয়ে ফ্রিজে পানির বোতল না রাখায় হাফেজ সাহেব ঐ এতিম শিশু ছাত্রকে বুকে পায়ে ধরে মাথার উপর তুলে ফ্লোরে আছাড় মেরে পা ভেঙ্গে ফেলার বর্বরোচিত নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারকিয় ও বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘঠেছে সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিন মাদার্শা গ্রামের হযরত শাহ ফকির মাওলানা দরবার শরীফের শাহ ফকির মাওলানা হেফজখানা ও এতিমখানায়।
৯ এপ্রিল’২৩ ইং রবিবার। ১৮ রমজান। হিফজখানার হুজুর ছাত্রদেরকে ফ্রিজে পানির বোতল রাখতে বলে বের হয়ে গেছেন হিফজখানা থেকে। হিফজখানার ১৪/১৫ জন ছাত্র সবার বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই। শিশুতোষ মনে খেয়াল ছিলনা ফ্রিজে পানি রাখার কথা। ইফতারের সময় এসে ফ্রিজে পানি না দেখে হাফেজ সাহেব মেজাজ হারিয়ে সব ছাত্রকে বেত্রাঘাত করলেন, এতিম শিশু মোহাম্মদ আব্দুর রহমান সাকিব বেত্রাঘাতের ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে নিলেন। এটাই ছিল হুজুরের কাঁছে বড় বেয়াদবী।
তৎক্ষনাত হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়লেন শিশু সাকিবের উপর। বুকের পাঞ্জাবীর উপর এবং এক পায়ে খামছে ধরে মাথার উপর তুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলেন। সাথে সাথে জ্ঞান হারাল শিশু সাকিব। বেশ কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে হাঁটতে পারেনা। তারপরও হুজুরের ভয়ে পা ছেঁছড়ে ছেঁছড়ে মাদ্রাসায় চলাফেরা করতে থাকে। ভয় দেখিয়ে সব ছাত্রকে সতর্ক করে দেওয়া হয় কাউকে না বলার জন্য। শিশু সাকিব ৩/৪ দিন পর যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে পাশের কারো মোবাইল থেকে বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম বড়ঘোনা গ্রামে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়। পরদিন ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দরিদ্র কৃষক বাবা দুয়েকজনকে সাথে করে সাতকানিয়া ছেলের মাদ্রাসায় গিয়ে দেখে ছেলে হাঁটতে পারছেনা। বাবা-ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কাঁদলেন। সকল ছাত্ররাই একই স্বাক্ষি দিল, সব ভিডিও ধারন করা হল। হুজুর মাদ্রাসায় নেই। সাকিবের বাবা পরিচালক হযরত শাহ মাওলানা নজরুল ইসলামের সাথে দেখা করলেন। ওনি দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, সাকিব খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে জিজ্ঞাসা করলে সাকিব জানিয়েছে, হাঁটার সময় খোঁচট খেঁয়েছে।” ঐদিনই সাকিবের বাবা ওসমান তার ছেলেকে নিয়ে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সাকিবের পায়ে এক্সরে করার পর ফ্র্যাক্সার ধরা পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। দরিদ্র বাবা অর্থ সংকটে চমেকে না নিয়ে বাঁশখালীতে স্থানীয় বৈদ্যের কাঁছে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে এখনো পর্যন্ত ঘরে রেখে চিকিৎসা চালাচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় তুলেছে সাধারন জনতা। মিডিয়াঙ্গনেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। হাফেজ নুর হোছাইনের এমন অমানবিক বর্বর নির্যাতনের বিচার দাবীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর অবস্থা বেগতিক দেখে হাফেজ নুর হোছাইন এবং মাদ্রাসার পরিচালক ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বাঁশখালী আহত শিশুর বাড়িতে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
হাফেজ নুর হোছাইনের কাঁছে জানতে চাইলে, সে ভূল স্বিকার করে জানান, “ঐদিন প্রচন্ড গরমে আমার মাথা গরম ছিল। ছাত্র কথা না শুনে ফ্রিজে পানির বোতল না রাখায় বেত্রাঘাত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে (সাকিব) জায়গা থেকে সরে যাওয়ায় আমার মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে লাতি মেরেছি, আছাড় দিইনি। (অডিও রেকর্ড আছে)। ডাক্তার বা ঔষধ দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে, কিছুই দেয়নি বলে জানান হাফেজ নুর হোছাইন।
এদিকে বিলম্বে হলেও আহত এতিম শিশু সাকিবের বাবা সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, তিনি তার এতিম শিশু পুত্র সাকিবের উপর এমন অমানবিক জগন্য বর্বর নির্যাতনের উপযুক্ত বিচার দাবী করেছেন।