অন্যের মনোযোগ তৈরীতে ব্যর্থ হয়ে সে নিজকে সমাজে অর্থহীন ভাবছে। মুলত সুন্দর, শিক্ষামুলক, গঠন মুলুক আলাপচারিতা যে কোন বন্ধনকে দৃঢ় করে সে ক্ষেত্রে স্মৃতি ধরে রাখতে একটি সেলপি তোলা যেতেও পারে, তবে সেলপি বা ছবি বন্ধুত্ব, পারিবারিক, আলাপচারিতা বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনও যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরী না করে তাও খেয়াল রাখতে হবে।
জানা গেছে,সেলফি তুলতে গিয়ে বিশ্বে মৃত্যুর হার কোন অংশে কম নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই এই মৃত্যুর হার সবছেয়ে বেশি। বহু সেলফিপ্রিয় তরুণ-তরুণী সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে অসময়েই। তাছাড়া বাংলাদেশে চলন্ত ট্রেনে নিজকে আধুনিক প্রমান করতে ও সেলপি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অনেকে মৃত্যু বরন করেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একটি জরিপে দেখা যায় বিশ্বে ১২৭ জন সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ভারতেই ৭৬ জন। মৃত্যু ঝুঁকি আছে জেনেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে সেলফি তুলেছে, যার ফলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হচ্ছে অবধারিতভাবেই।
মনে রাখতে হবে, নিজকে পরিচয় করানোর এই মিথ্যে প্রতিযোগীতা কখনো আধুনিকতা নয়।বিজ্ঞানের এ যুগে কোনটি ভালো কোনটি মন্দ তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন আজ আর নেই।
কি গ্রাম,শহর সকলের মন বন্দি থাকে আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রঙ্গিন পর্দায়। বাস্তবে এই সমাজে টাকার সমস্যায় অনেকে না খেয়ে থাকবে তবুও তারা মুঠোফোনে এমবির জন্য টাকা ধার করতেও প্রস্তুত। তাদের এই ধরনের মানসিকতা কখনও মঙ্গলজনক নয়।আবেগ সব সময় অকল্যান বয়ে আনে এবং জ্ঞান শুন্যতা সৃষ্টির কারনে ভয়াবহ সমস্য তৈরী করতে পারে সেসব বিষয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
সেলপি কোন দেশের রাজনৈতিক, সমাজিক পরিবর্তন করতে পারে তা কিন্তু মোটেও নয়।জাতীয় নির্বাচন, ভোটাধিকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ভিসানীতি সহ নানা বিষয়ে বন্ধুত্বকে সেলফি গাঢ় করে তার কোন প্রমানও ইতিমধ্যে পাওয়া যায়নি। কে কত ক্ষমতাবান কারসাথে কার সম্পর্ক রয়েছে এবং ঐ সম্পর্ক কতটা গাঢ় তা প্রমানে অনেকে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলপি তুলে পোষ্ট দেয় বা তা প্রচার করার জন্য অন্যদের মাধ্যমে তা জোর প্রচেষ্টা চালায়।
কেউ জো বাইডেনের সাথে বা কেউ মন্ত্রীর সাথে, কেউ পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কে কত ক্ষমতাবান তা প্রমানে সবাই প্রানান্তকর চেষ্টা করে। মুলতঃ সেলফি তোলার আসক্তি দিনেদিনে কঠিন সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। জানা যায়, বিভিন্ন প্রোগামে গিয়ে বা কারও সাথে তোলা বা নিজের অন্তত ৬টির বেশি সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করার তাড়না যদি সে বোধ করে তখন বুঝতে হবে তার মানসিক সমস্যা তৈরী হয়েছে এবং সে ‘ক্রনিক সেলফাইটিস’ নামে রোগে আক্রান্ত। সেল্পি নিয়ে বর্তমানে একটি বিশেষ কোর্সে সকলের পড়াশোনা করার সুযোগ থাকছে লন্ডন কলেজে। ‘দ্য আর্ট অব ফটোগ্রাফিক সেলফ-পোট্রেট’ নামের এ কোর্সে শিক্ষার্থীরা সেলফির নানা খুঁটিনাটি বিষয় শিখতে পারবে এবং জানতে পারবে এবং সে শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি হিসেবেও ধরা হবে বলে জানা যায়।
সেলফি তোলার সময় ঠিক কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, কত ধরনের সেলফি তুলতে বা কি উপায় অবলম্বন করে সেলফি তোলা যায় ও সেটিকে কিভাবে জনপ্রিয় করা যায় সে বিষয়ে ও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কার কার সেল্পিপ্রীতি রয়েছে বা এই প্রীতি কতটা ব্যক্তি বা পারিবারিক বা রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপুর্ন তাও জানা যাবে। ক্ষনিক তরে নিজকে আনন্দময় করতেও স্মৃতিকে ধরে রাখতে এর গুরুত্ব থাকলেও পারিবারিক সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এর কোন গুরুত্ব নাই। জীবন কে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিতে এই ধরনের কর্মযজ্ঞ একেবারেই মন্দ, তা কিন্তু নয়। এ ধরনের কর্মযজ্ঞ যেন আবেগকে অতিমাত্রায় তাড়িত না করে তা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক-মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম
কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষকঃ