• রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
সৈয়দ রুহুল আমিন স্মৃতি একাডেমির সিইও’র যোগদান ও পুরস্কার বিতরণ ধনবাড়িতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণে দোয়া ও জনসভা অনুষ্ঠিত ধামরাই ইউনিয়ন বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে জনসভা অনুষ্ঠিত সেনবাগ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে শীতার্ত ও দুস্হদের মাঝে কম্বল বিতরণ আমতলীতে হত্যার হুমকি দিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষন ঘটনায় অভিযুক্ত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের মধুপুরে মিলছে না শিশু সুরক্ষা টিকা হতাশায় শিশুর অভিভাবক  আমতলীতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে তারুণ্যের উৎসব পালিত সেনবাগে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ক্রীড়া উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ বাংলাদেশ স্কাউট মধুপুর উপজেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নোয়াখালীতে বন প্রহরীকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পিটানোর হুমকি যুবদল নেতার

কালের পরিবর্তনে সাত্ত্বিক পূজা কোথায় হারিয়ে গেছে! ভাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিজয় চন্দ্র সরকার, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

পুকুরের জলে ভাসছে গুচ্ছ-গুচ্ছ শোলার ডাঁটি, দড়ি দিয়ে বাঁধা। সেগুলি একে-একে তুলে এনে বারান্দায় বসে নকশা তুলছেন নারায়ণ কর্মকার। তাঁর ধারালো ছুরিটি রাখা আছে দু-টুকরো শোলার ভাঁজে। পাশে রাখা কয়েক বান্ডিল বিড়ি। কাজ চলছে সারাদিন। সন্ধের পরেই গ্রামে অন্ধকার। লম্ফ, হারিক্যান, লন্ঠন। টিমটিম করছে আলো। ইলেকট্রিক যদি-বা এলো, লো ভোল্টেজ অথবা ঘন ঘন লোডশেডিং। আর সারাদিনের কর্মক্লান্তি তো থাকেই।

গ্রামীণ কামারশালাটি তাঁদের। সারা বছর কামারশালার কাজ। হাপর টানা, হাতুড়ি পেটানো। খড়ের ছাউনির পরিবর্তে এলো টিনের চাল, ডাক পড়ল কর্মকারদের। বর্ষার আগে বরাত অনেক। লাঙলের ফাল পাজানো, কাস্তের পুরি কাটা। বৃষ্টি নামলে বাড়বে গাছপালা, ঝোপজঙ্গল, লতাপাতা। খোঁজ পড়বে কুড়ুল-কোদাল-কাটারির। বর্ষার টান ফুরিয়ে এলে, শরতে পুজোর আগে অন্য ব্যস্ততা। চাই ডাকের সাজ।

চারপাশের সম্পন্ন গ্রামগুলিতে পারিবারিক দুর্গাপুজো সংখ্যায় অনেক। প্রায় সব প্রতিমাই একচালের, সাবেকি। এক‌ই কাঠামোর মধ্যে সবগুলি মূর্তি। দুর্গা-অসুর, কার্তিক-গণেশ, লক্ষ্মী-সরস্বতী। ছুতোররা বলেন ছয় পুতুলের প্রতিমা। প্রত্যেকের রঙ আলাদা। এক‌ই কাঠামোর মধ্যে এতগুলি রঙের সমাহার, তাই সাদা শোলার সাজ চাই, বর্ণবৈচিত্র্য হবে।

রঙিন কাগজের নকশা, চুমকি, রাঙতা, বাদলা — চকচক করছে চারদিকে। রুলময়দা আর তুঁতে দিয়ে আঠা তৈরি হচ্ছে হাঁড়িতে। গ্রামে এবং গ্রামের বাইরে অন্তত পাঁচ-সাতটি প্রতিমা সাজাবেন তিনি। পুজো এগিয়ে এলে বাড়ির অন্যান্যরাও হাত লাগাবেন কাজে। পারিবারিক পুজোগুলিতে প্রতিমায় ডাকের সাজ পরানো শুরু হবে চতুর্থীর দিন থেকে। একার হাতে একটি বড়ো প্রতিমায় ডাকের সাজ পরাতে অন্তত চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। নারায়ণ কর্মকারের মৃত্যুর পরে চারপাশের পাঁচ-সাতটি গ্রামে শোকের ছায়া। প্রতিমা সাজাবেন কে? উত্তরসূরীরা কামারশালের কাজটুকুই জানেন। ডাকসাজের কাজে তাঁদের আগ্রহ নেই। সময় ও ধৈর্য চাই। তুলনায় পারিশ্রমিক কম। গ্রামীণ পারিবারিক পুজোর সমস্যা নানা। সুখ-সমৃদ্ধির সময়ে মাতৃ আরাধনার সূচনা হয়েছিল, কালক্রমে কমে এলো অর্থনৈতিক আয়‌, বড়ো সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাগিতে শতটুকরো হল। অথচ বাজার ক্রমশ দুর্মূল্যের। সেখানে-যে সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না। সেইখানেই সংঘাত বাঁধে। শহরের শিল্পীদের গ্রামে এসে কাজ করার আগ্রহ কম। কর্মকাররা ডাকের সাজ তৈরি না করলে এগিয়ে আসতেন সূত্রধররা। সূত্রধরদের শিল্পদক্ষতা বহুমুখী।

নারায়ণ কর্মকারের কনিষ্ঠ পুত্র দেবদাস কর্মকার এই ধারাটিকে অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। মুকুট পরানোর সময়ে চাই উঁচু টুল অথবা টেবিল। টেনে আনা হয় নিকটবর্তী কার‌ও বাড়ি থেকে। আগে বসবে মুকুট, তারপরে কানপাশা, সবশেষে চূড়া। আগে ব্লাউজ, পরে চেলি। চেলিতে কী অপূর্ব সব কলকার কাজ। থার্মোকল যতদিন আসেনি ততদিন শোলার কাজে কৌলীন্য ছিল।

একচাল প্রতিমার সৌন্দর্যে ঠিকরের ভূমিকা অনেকখানি। চাল ঠিকরে আর কোল ঠিকরে। চালি আঁকাও এক আশ্চর্য শিল্প। এখন অনেকেই দশকর্মার দোকান থেকে কিনে আনেন চালির ছবি। এবার মায়ের আগমন কিসে? নৌকায়। বিসর্জন গজে। দুই প্রান্তে থাকবে সেই আগমনী ও বিজয়ার ছবি। শীর্ষে থাকবেন শীর্ষেন্দু। মন্দিরেই আঁকা হবে। কাছে হলে কেউ চালিটি কাঁধে নিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসবেন ছুতোরঘরে, আবার আঁকা হয়ে গেলে তুলে আনবেন মন্দিরে। চালি সুন্দর না হলে যে পুজোর চালচিত্রটাই মাটি হয়ে যায়!

এতগুলি প্রতিমা সাজাতে সাজাতে ষষ্ঠীর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নেমে আসে। প্রতিমা সাজানোর পরে মন্দিরে পড়ে থাকে দু-এক টুকরো রঙিন কাগজ, চুমকি, শোলা আর চকচকে বাদলা। সে-সব টুকরো কচিকাঁচাদের হাতে যেন সাত-রাজার-ধন মানিক!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ