এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) থেকেঃ
ব্যক্তিগত যেকোন অর্জনই ব্যক্তি, পরিবার ও স্বজনদের জন্য আনন্দের গৌরবের। তবে কিছু কিছু অর্জনের আনন্দ ও গৌরবের কৃতিত্ব ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বলয় ছড়িয়ে পুরো জনপদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট প্রধান শিক্ষক এ্যাওয়ার্ড’২০২৩ অর্জন করলেন বড়ঘোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের এ অর্জনটি নিঃসন্দেহে ব্যক্তি জয়নাল আবেদীন ছাড়াও একটি পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনপদকে নাড়া দিয়েছে, গৌরবান্বিত ও সম্মানিত করেছে।
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের জন্ম বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নে। বাবাও ছিলেন একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং অন্যান্য ভাই বোনেরাও শিক্ষক। এমন কি শ্বশুরও একজন নামকরা শিক্ষক। পুরো শিক্ষক পরিবারে বেড়ে উঠা সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী তুখোড় মেধাবী এ শিক্ষক চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করে ১৯৯৯ সালের জুন মাসে উত্তর শেখেরখীল-১ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম সহকারী শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করার পর থেকেই ঐ স্কুলের ছাত্র ছাত্রী ও বিদ্যালয়ের পরিবেশের অভূতপূর্ব মানোন্নয়ন ঘঠে।
সহকারী শিক্ষক হলেও সকল শিক্ষকদের সাথে লক্ষ্যনীয় সুসম্পর্ক তৈরী করে সকল শিক্ষকদের মাঝে টীমস্প্রিট সৃষ্ঠি করাতে জয়নাল আবেদীনের ভূমিকা ও সৃজনশীলতার প্রয়োগ ছিল দৃষ্ঠান্তমুলক। ২০১৯ সালে বাঁশখালীর উপকূলীয় প্রান্তিক জনপদ বড়ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর পুরো দৃশ্যপটই পাল্টে যায় এ বিদ্যালয়টির। প্রধান শিক্ষক হিসাবে প্রান্তিক এলাকার স্কুল হিসেবে বড়ঘোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের প্রতিকূল মানষিকতার সাথে একপ্রকার কৌশলী লড়াই করে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে অভিভাবক দের সাথে যোগাযোগ, বাড়ি বাড়ি ভিজিট করা, বিদ্যালয় এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণ, মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য খাতা, কলম, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ।
এই সব কার্যকর, বিদ্যালয়ের জন্য উন্নয়ন ব্যায়ের টাকা যথাযথ ব্যয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধকল্পে গৃহিত বিভিন্ন উদ্যোগ, বিদ্যালয়ের ভৌত অবস্থা ও পরিবেশের উন্নয়ন, সহকারী শিক্ষকদের শ্রেনী পাঠদান পর্যবেক্ষন, নিয়মিত এসএমসি’র সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় ইনোভেশন, বিদ্যালয় আঙ্গিনা সবুজায়ন ও ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন, শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল কাজে গতি সৃষ্ঠি সহ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে বিবেচ্য প্রায় সকল বিষয়ে এ ক্যাটাগরীর স্কোর করে জয়নাল আবেদীন আতিক উপজেলার শ্রেষ্ঠ পুরুষ প্রধান শিক্ষক এ্যাওয়ার্ড’২৩ অর্জন করেন।
জয়নাল আবেদীনের এ অর্জনে স্কুলের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আনন্দিত ও গর্ববোধ করছেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন জানান, শ্রেষ্ঠত্বের এ অর্জনে প্রত্যেকের মত তিনিও আনন্দিত। তবে তিনি এ কৃতিত্বের দাবী নিজের একা নয় জানিয়ে বলেন, এ গৌরবের শক্তিশালী অংশ স্কুলের সকল শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক ও এসএমসি’র সদস্যরা। কেননা প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে আন্তরিক না হলে এ অর্জন সম্ভব হতনা। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত এ জন্য যে, আমি আমার সৃজনশীলতা দিয়ে প্রত্যেকের মন মানষিকতার প্রতি সচেতন থেকে প্রত্যেকের অন্তরে ভালবাসা ও আস্থাসহ স্থান করতে পেরেছি।
তিনি তাঁর এ অর্জনের জন্য উপজেলার সকল শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আগামীতেও বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার দৃষ্ঠান্তমুলক মানোন্নয়নে সকলের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করেছেন।