এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা):
সম্প্রতি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে মালিক পক্ষ কর্তৃক মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের শিকার অমিতের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারলে হয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে বলেও আশংকা তাদের। এদিকে মধ্যস্থতাকরীদের চাপের মুখে স্বল্প টাকার বিনিময়ে বিষয়টি নিষ্পত্তিরও অভিযোগ উঠেছে। তবে তারা অমিতের চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
জানাগেছে, উপজেলার কপিলমুনি বাজারের মসজিদ রোডে অবস্থিত মহাপ্রভু বস্ত্রালয়ের মালিক অসীম সাধুর পুত্র প্রভাবশালী বিশ্বজিৎ সাধু ও তার লোকজন কর্তৃক বর্বর নির্যাতনের শিকার অমিতের অবস্থা এখন আশংকাজনক। ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে বিশ্বজিৎ দোকান কর্মচারী অমিতকে তার বাড়িতে ডেকে নেয়। নিয়ে যাওয়া হয় কপিলমুনি সদরস্থ নিজ ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল তার লোকজন।
তাকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয় তারা। এক পর্যায় তাকে বেঁধে ফেলা হয়। চুরির মিথ্যা নাটক সাজিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ে শুরু হয় নির্যাতন। বিরামহীন নির্যাতনের এক পর্যায় রাত ১টা পর্যন্ত দোকান কর্মচারী অমিতকে চুরির অপবাদে বর্বরচিত নির্যাতন করে তারা। তাদের অত্যাচারে সীমা এতোটাই যে, একাধিকবার জ্ঞান হারায় অমিত। মারপিঠে মারাত্মক আহত করার পরও ক্ষ্যান্ত হয়নি পাষণ্ডরা। একপর্যায় সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলা হয় অমিতকে।
কিন্তু অস্বীকৃতি জানালে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শুরু হয় অমিতকে বিদ্যুৎ এর শক্ড দেয়ার তোড়জোড়। যথারীতি দেয়া হয় বৈদ্যুতিক শক্ড। এতে অমিতের সমস্ত শরীর পুড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো দাগের চিহ্ন রয়েছে যা দু-চোখে দেখা যায় না বলে জানান এক প্রত্যাক্ষদর্শী।
সুত্র জানায়, কপিলমুনি বাজারে কাপড় ব্যবসায়ী মহাপ্রভু বস্ত্রালয় মালিক অসীম সাধুর কাপড়ের দোকানে কয়েক বছর ধরে কাজ করতেন নির্যাতনের শিকার অমিত। এর ফলে অমিত দোকান মালিকের কাছে তার দীর্ঘ প্রাপ্য বেতনের টাকা চাইলে অসীম সাধুর পুত্র বিশ্বজিৎ সাধু তার পাওনা টাকা দিতে অস্বীকার করে। এক পর্যায় বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে তারা। এরপর রাগ সাধতেই তাকে চোরের অপবাদ দিয়ে কর্মচারী অমিতকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় বিশ্বজিৎ। প্রভাব খাটিয়ে তার উপর বর্বরচিত নির্যাতন করে আহত করা হয়। বর্তমানে অমিতের অবস্থা আশংকাজনক। তার কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসছে বলে জানাগেছে।
তার প্রস্রাব ও পায়খানার সাথে রক্ত পড়ছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। সুত্র জানায়, ইতোমধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের চাপের মুখে অমিত পরিবার আপোষ করতে বাধ্য হয়েছে। তার কাছ থেকে ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া স্টাম্পটি ফেরৎ ও যত সামান্য কিছু টাকা অমিতের পরিবারকে দিয়েছে পাষণ্ডরা। এবিষয়ে জানার জন্য অসীম সাধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এবিষয় অমিতের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের দৃষ্টিতে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। জানাগেছে অমিত খুলনার নোয়াপাড়ার মানিক অধিকারীর ছেলে। বর্তমানে তারা নাছিরপুর বসবাস করছে।