নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক সহকারী শিক্ষকের বেতন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের নানা আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ করায় বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শিক্ষক বিমলেন্দু ভৌমিকের। বকেয়া বেতন পাওয়ার দাবিতে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত নয় মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না বিমলেন্দু ভৌমিক। দীর্ঘ ৩৮ বছর একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের পক্ষথেকে তাকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারীতে রাজিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদেন মোঃ ওমর ফারুক। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদাই, বিদ্যালয়ের নামে রশিদ বিহীন অনুদান গ্রহণ করেন ওমর ফারুক।
স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে এসকল আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ করেন বিমলেন্দু। পরে গত মে মাস থেকে বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই বিমলেন্দুর শিক্ষকতা বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক। বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেও সমাধান পাননি ভুক্তভোগী শিক্ষক। নিরুপায় হয়ে গত মঙ্গলবার(১১ জুলাই) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের থেকে স্কুলের নামে অনুদান গ্রহণ করলেও সেগুলো স্কুলের রেজিস্ট্রার বইতে লিপিবদ্ধ করেননি। এমনকি দাতাদের অর্থ গ্রহনের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানের মানি রিসিট দেননি। স্কুলে অনুদান দিয়েছেন রাজিবপুর এলাকার বাবর ডাক্তার, সোনালি ব্যাংকের কর্মকর্তা কামাল পাটোয়ারি সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন। তারা জানান, অনুদান প্রদানের সময় তাদেরকে কোন মানি রিসিট দেননি প্রধান শিক্ষক।
আরও জানা যায়, গত এপ্রিলের ২৭ তারিখ স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে ১৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। তবে সেই টাকা স্কুলের রেজিস্ট্রার বইতে লিপিবদ্ধ না করা হলেও বিদায় অনুষ্ঠানের খরচ দেখানো হয়েছে স্কুল ফান্ড থেকে।
এছাড়া সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীদের অবিভাবকদের জন্য ‘শিক্ষকের কাছে লেখা আব্রাহাম লিংকনের চিঠি’র প্যানা তৈরী করা হয়। সে সকল প্যানা শিক্ষার্থীদের কাছে ২০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়। তবে এক্ষেত্রেও বিক্রয়লব্ধ অর্থ রেজিস্ট্রার বইতে লেখানো হয়নি। অপর দিকে প্যানা তৈরীর খরচ দেখানো হয়েছে স্কুলটির ফান্ড থেকে। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পূর্বে নিলামহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং সোনাইমুড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তার বিএড সনদের বিষয়ে অভিযোগ ওঠে। তার সর্বোচ্চ সনদটি গ্রহন করা হয়েছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আর এখন পর্যন্ত এই বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দেয়নি আদালত।
প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষাকের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুলের পুরাতন বই সরকারি নিলাম ছাড়াই গোপনে বিক্রি করেছেন এই শিক্ষক। তাছাড়া স্কুলের পরিচালনা কমিটির কয়েকজন অসাধু সদস্যের যোগসাজশে চালাচ্ছেন নিয়োগ বাণিজ্য। সম্প্রতি কেরানি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগেও গোপনে হয়েছে আর্থিক লেনদেন। এছাড়া গত সপ্তাহে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের বাইরে থেকে শিক্ষক এনে বাধ্যতামূলক কোচিং করানোর জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। বিএড সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। তবে তথ্য বলছে, প্রধান শিক্ষক তার এমপিও ভুক্তির আবেদনে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদটি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উৎকোচের প্রস্তাব দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে কথা হয় সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।