এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী চট্টগ্রাম থেকেঃ
দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় মানুষের মৌলিক সেবা নিয়ে প্রতারনার অন্ত নেই, তাই বলে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে প্রতারনা! চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে অদ্ভুত রজস্যময় এক পেনড্রাইভ ডিজিট্যাল ডাক্তারকে গ্রেফতার করে কারাদন্ড প্রদান পুর্বক শ্রীঘরে পাটানো হয়েছে। ধৃত পেনড্রাইভ ডাক্তারের নাম মোহাঃ ইউনুস(৪৫) পার্শ্ববর্তি সাতকানিয়া উপজেলার নাসির উদ্দিনের ছেলে বলে জানা গেছে।
২০ জুলাই’২৩ ইং বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার সময় বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি টীম উপজেলার
গুনাগরী রামদাশ মুন্সির হাটে অভিযান পরিচালনা করে পেনড্রাইভ নির্ভর অদ্ভুত এই ডিজিটাল ডাক্তার ইউনুসকে গ্রেফতার করা হয়।
ধৃত ইউনুস দির্ঘ ১০/১১ বছর থেকে উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সির হাটের উত্তর প্রান্তে আশ্রম গেইটে বাঁশখালী ফার্মেসীতে বেআইনীভাবে চেম্বার করে চিকিৎসার নামে প্রতারনা করে আসছিল।
ভ্রাম্যমান আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান, নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে চেম্বারে কর্মরত ইউনুসকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তিনি একাধারে বাত, ব্যাথা, মেডিসিন, মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। পড়াশুনা করছেনে মানবিক বিভাগে এস,এস,সি পর্যন্ত (তার ভাষ্যমতে) ২০১৩ সালে ১২ মাসের মধ্যে ঊনি আবার ১৮ মাসের কোর্স সম্পন্ন করেছেন পল্লি চিকিৎসক হিসেবে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে ঊনার চিকিৎসা পদ্ধতি কিন্তু বেশ ইউনিক।
ছোট বক্সের মত যন্ত্রের উপর রোগীর হাত রাখানো হয় আর কম্পিউটার স্ক্রিনে রোগীর পায়ের তালু থেকে মাথা, এনজাইম থেকে হরমোন, ভিটামিন থেকে মিনারেল, অস্থি থেকে তরুণাস্থি, নার্ভাস সিস্টেম থেকে ডায়াজেশন সিস্টেম মোট কথা সারা শরীর ডায়াগনোসিস হয়ে যাবে। যদিও রির্পোটে কি বলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিনি তার মর্ম উদ্ধারে এবং বুঝাতে ব্যর্থ হন এবং তার কম্পিউটারে সংযুক্ত পেনড্রাইভ খুলে নেওয়া মাত্র তার যন্ত্রের কার্যকরিতা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
মূলতঃ ইউনুস পেনড্রাইভে কিছু তথ্য সর্বসাধারনের জন্য সংরক্ষিত রাখা থাকত। রোগীদেরকে ডায়াগনোসিসের নামে সংরক্ষিত তথ্য দেখিয়ে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার কথা বলে দীর্ঘ ১১ বছর যাবত অসহায়, দরিদ্র ও গ্রামীণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। অভিযুক্ত চিকিৎসক মোঃ ইউনুসকে তার বেআইনী প্রতারনামুলক কৃতকর্মের দণ্ড স্বরূপ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারায় ০৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে শ্রীঘরে পাঠানো হয়। অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর সদস্যবৃন্দ। জনস্বার্থে প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান খন্দকার মাহমুদুল হাসান।
এদিকে দির্ঘদিন ধরে ডিজিট্যাল প্রযুক্তির সহযোগিতায় অসহায় রোগীদের ভেল্কি লাগানো প্রতারনামুলক তথাকথিত চিকিৎসা সেবা পরিচালনাকারী প্রতারক ডিজিট্যাল ডাক্তারকে গ্রেফতার করে মুখোশ উম্মোচন করে দেওয়ায় এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাধারন জনতা উপজেলা প্রশাসন ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) খন্দকার মাহমুদুল হাসানের ভূয়শী প্রশংসা করেছেন এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে চিকিৎসা সেবা খাতে প্রতারনার সমুলে উৎপাতন করতে এ ধরনের আরো অভিযান পরিচালনার অনুরোধ করেছেন।