রনজিত কুমার পাল (বাবু), স্টাফ রিপোর্টারঃ
ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সম-অধিকার ও সম- মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০২৩ বর্ণাঢ্য আয়োজনে শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ’ সম্মেলনে শ্রী নিতাই চাঁদ তালুকদার (এফ সি এ) কে সভাপতি ও শ্রী নন্দ গোপাল সেন কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে দশটার সময় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঢাকা জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন /২০২৩, শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে ঢাকা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক শ্রী নিতাই চাঁদ তালুকদার (এফ সি এ)এর সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য-সচিব শ্রী নন্দ গোপাল সেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক।
উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জী প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপক পাল দীপু,কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রজত কুমার সুর রাজু,সহ-মহিলা সম্পাদক ড. সঞ্চিতা গুহ চৈতী,,সহ-সমাজ কল্যান সম্পাদক বিপুল ঘোষ শংকর।
অনুষ্ঠান শুরুতেই পবিত্র গীতা পাঠ ও করোনা কালীন সময়ে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা আত্মাহুতী দিয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
এরপর প্রথম অধিবেশনে বক্তাগন তাদের বক্তব্যে বলেন- বাঙ্গালী জাতির দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে এবং ১৯৭২ সালে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলনীতি করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাতিল এবং একটি মাত্র ধর্মকে সংবিধানে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় সম-মর্যাদা ও সম-অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাহাদের জাতীয় জীবনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়। ফলে, হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের প্রবণতা দেখা দেয় এবং নিরাপত্তাহীনতা ও অবজ্ঞাজনিত কারণে সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণ, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আয়োজনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ একদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার ক্ষয়িঞ্চু হার রোধ এবং অন্যদিকে ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামোর ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ গভীরভাবে অনুভব করেন। এরই ফলশ্রুতিতে প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করিবার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে ‘মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সমগ্র বাংলাদেশের পূজা-পার্বণ, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদায় পালন এবং সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে ঐক্যবদ্ধ করিয়া জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমমর্যাদা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’ গঠন করা হয়।
পঞ্চম সংশোধনীর ধাবাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে একটি ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কার্যক্রম আরও প্রসারিত হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, এই সংগঠনকে শক্তিশালী গঠন করার লক্ষ্যে আপনাদের সুসংগঠিত হতে হবে এবং আমাদেরকে ঐক্য বদ্ধ থাকতে হবে তাই আসুন আমরা সকল বিভেদ ভুলে একত্রিত হয়ে কাজ করি।
পরবর্তীতে সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে ঢাকা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির শ্রী নিতাই চাঁদ তালুকদার (এফ সি এ) কে সভাপতি ও শ্রী নন্দ গোপাল সেনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে দ্বিতীয় অধিবেশনের কার্যক্রম শেষ করেন।