মোঃ রিয়াজুল সোহাগ, নোয়াখালী থেকেঃ
নোয়াখালী জেলা শহরের শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম মাঠে ১৪জুলাই শুক্রবার বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতেই বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে না বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি মিছিল, সভা-সমাবেশ করলেও হরতাল-অবরোধ করেনি। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ সরকারকে ফেলে দেবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের সব দপ্তর দখল করে নেব। গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটাতে আমরা হরতাল-অবরোধ দিচ্ছি না।’
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহরের শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম মাঠে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১১ সালে সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর প্রয়োগ করে (তৎকালীন প্রধান বিচারপতি) এ. বি. এম. খায়রুল হককে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দেয়া হয়। কেন, আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে, নিরপেক্ষ সরকার থাকলে, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। (নির্বাচনে) ত্রিশটি আসনও পেত না।’
তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারা বলে নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করব। আমরাই ভোট দেয়াব, আমাদের মত করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনো বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোট কেন্দ্রে যাইতেই দেয় না।’
“আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বললেন—‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে, আমি কোনো বাধা দেব না।’ আমরা ভাবলাম বোধ হয় শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কী করা যাবে বলেন। ভূতের মুখের রাম নাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আবার বলছেন, ‘আমরা সুন্দর ভোট করব। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার (অবাধ ও সুষ্ঠু) ইলেকশন হবে।’ আহা রে কী আবদার। শিয়ালের কাছে বারবার কুমিরের বাচ্চা দেয়া যাবে না। বারবারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দেব না।”
আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আবারও বলছি, ভালো ছেলের মত সুবোধ বালক-বালিকার মত পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন। যদি ভালোয় ভালোয় শুনে পদত্যাগ করেন তাহলে তো ভালো, তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘(বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। আমরা নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।’
পদযাত্রায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় প্রচার বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানসহ অনেকে।
পদযাত্রায় অংশ নিতে সকাল থেকে নোয়াখালী ছাড়াও ফেনী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম মাঠে সমবেত হন। সেখানে সমাবেশ শেষে পদযাত্রাটি বেগমগঞ্জ উপজেলার দিকে অগ্রসর হয়।