যশোর প্রতিনিধিঃ
যশোরে নাজিম উদ্দীন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ, ডিবি, রাজনৈতিক নেতাদের বডি গার্ড পরিচয় দিয়ে একাধিক অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত নাজিম যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার জঙ্গলবাধাল গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। সম্প্রতি তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা মেলে তিনি একটি মোটরসাইকেলের উপর বসে আছে। ছবিতে দেখা যায় মোটরসাইকেলের সামনে অংশে যশোর পৌরসভার জরুরী স্টিকার ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও নাজিম উদ্দীন যশোর পৌরসভার কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নয়। যার মোটরসাইকেল নাম্বার (যশোর ল-১৩-১২২৭)।
অন্যদিকে তিনি তার এলাকায় যশোর পৌর মেয়রের পিএস সহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাজিম উদ্দীন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অফিস রুমের নেমপ্লেটের সামনে দাড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেন, শুধু তাই নয় বিভিন্ন মন্ত্রী, অভিনেতা এমনকি প্রশাসনের ব্যবহৃত ওয়্যারলেস হাতে নিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড দেন। এ সব ছবি দেখিয়ে নিজেকে তিনি কখনো পুলিশ, গোয়েন্দা, রাজনৈতিক নেতাসহ নানা রকম পরিচয় দেন।
এছাড়া নাজিমের বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম মিন্টু নামে এক ব্যাক্তি গত ৩০ এপ্রিল একাধিক দপ্তরে অভিযোগ প্রদান করেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র এলাকার পরিবেশসহ আইন শৃঙ্খলা নষ্ট করে আসছে। নাজিম উদ্দিন একজন নেশাখোর সন্ত্রাসী ও বসুন্দিয়া ইউনিয়নের কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সেল্টারদাতা। অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, নাজিম উদ্দীনের নামে কোতয়ালী মডেল থানায় দুটি মামলাও আছে যথাক্রমে এফ আই আর না ০, তারিখ: ২/১০/২০১০ ধারা ৫২০/৩০৭/৩২৫/৩২৬/৫০৬ পেনালকোড ১৮৬০। এফ আই আর না ২৮/১৯৫, তারিখ: ২৯/৩/২০০০ ধারা ৪৪৮/০২৩/৩৫০ পেনালকোড ১৮৮৬০।
স্থানীয় বাবু নামে এক ব্যাক্তি বলেন, নাজিমের মোটসাইকেলে পৌর সভার স্টিকার লাগানো ও পৌর মেয়রের পিএস পরিচয় প্রদান করে একায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড করে বেড়ায়। মাঝে মাঝে কিছুদিনের জন্য এলাকায় থাকেনা। সে আসলে বহু রুপি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করে বিভিন্ন পরিচয় প্রদান করে।
নাম প্রক্যাশ্যে অনিচ্ছুক বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্য বলেন, নাজিম উদ্দীন খুব বাজে প্রকৃতির একটা ছেলে। সে পেশায় কিছুই করে না। তার কাজ হলো মানুষকে ব্লাকমেইল করা, এলাকায় শালিস বিচারের নামে অর্থ আদায় করা, প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করাই হলো তার প্রধান কাজ। সে এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার ডান হাত বাম হাত পরিচয় দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দপ্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও ব্যবস্থা নেননি কেউই।
এ বিষয়ে স্থানীয় ওমর আলী জানায়, তার কোন কাজ নায় সে এমন ধান্দাবাজি করে চলে। এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। এছাড়া সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় প্রদান করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে।
নামিজের ছবি দেখিয়ে যশোর পৌ মেয়র হায়দার গনী খান পলাশের কাছে জনতে চাইলে তিনি জানান, নাজিম উদ্দীন নামে আমাদের কোন কর্মচারী নাই এবং আমি তাকে চিনিনা। যদি পৌর সভার স্টিকার ব্যবহার করে থাকে তাহলে সেটা আপরাধ। বিষয়টা আমরা প্রশাসনের জানিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিন জানায়, আমি আগে ঢাকায় চাকরি করতাম তার সুবাদে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ছবি তুলেছি কিন্তু সেটা দিয়ে আমি কোন অপকর্ম করিনা। আর পৌর সভার স্টিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়র আমার পরিচিত। আমি আগে পৌর সভার বিভিন্ন কাজে ছিলাম এর কারনে মেয়রের ছেলে ও পিএস এ স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছে। এ সময় নাজিম তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক’ সার্কেল) জুয়েল ইমরান বলেন, নাজিম উদ্দীনের ব্যাপারে আমরা জেনেছি। জঙ্গলবাধাল স্কুলের সভাপতি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন, তার একটা কপি তিনি আমাদেরও দিয়েছেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও নাজিম উদ্দীন পাল্টা-পাল্টি মামলাও করেছেন, সেই মামলার তদন্ত চলছে, এবং সেটার সাথে এই অভিযোগের বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি।