মোঃ রিয়াজুল সোহাগ, নোয়াখালী থেকেঃ
নোয়াখালীর সেনবাগে এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সেনবাগ থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের স্ত্রী সহ অন্যান্য সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
ভিকটিমের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তার অসংলগ্ন কথা বার্তায় পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কৌশলে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ভিকটিমের স্ত্রী রজ্জবের নেছা প্রঃ রিনা স্বীকার করেন যে, তার স্বামীকে হত্যায় সে ও তার প্রতিবেশী পরকিয়া প্রেমিক মোঃ মাসুদ(৩৫) জড়িত। তাদের পরিকল্পনায় ভিকটিম মহিন উদ্দিনকে হত্যা করা হয়।
নিহত মহিন উদ্দিন (৪৫) উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের হরিণ কাটা গ্রামের ফকির বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। চট্রগ্রামে তিনি নিজের একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন।
সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরের দিকে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর আগে, ৬আগস্ট রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণ কাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তিনি আরো স্বীকার করেন যে, ২০০৬ সালে ভিকটিমের সাথে পারিবারিকভাবে তার বিবাহ হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত মাসুদ ও তার স্বামী এক সময় যৌথভাবে মাছের প্রজেক্ট করে ব্যবসা করতেন। সে সূত্রে মাসুদের সাথে তার পরিচয় ও কথাবার্তা হতো। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বহিভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তার স্বামী ও প্রতিবেশী মাসুদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়ে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এতে মাসুদ ভিকটিমের উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। যার ধারাবাহিকতায় ঘটনার ২ থেকে ৩ দিন পূর্বে তিনি ও মাসুদ ভিকটিমকে জীবনে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামাফিক ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় মাসুদ ২০টি ঘুমের ঔষধ কিনে তাকে দেন এবং দুধের সাথে মিশিয়ে তার স্বামীকে খাইয়ে দিতে বলেন।
সেদিন রাত্র অনুমান ০৯টার সময় ০১ গ্লাস গরম দুধে ১৪ টি ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিমকে খাইয়ে দিলে তিনি প্রচন্ড ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েন। পরদিন রাত অনুমান ০৩ টার সময় উক্ত মাসুদ তার সঙ্গীয় মুখোশ পরা ০২ জন লোক সহ ভিকটিমের দরজায় নক করলে রিনা ঘরের দরজা খুলে দেন। অতঃপর তারা ভিতরে প্রবেশ করে ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় টেনে হেঁচড়ে দরজার সম্মুখে উঠানে এনে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
আসামী রজ্জবের নেছা প্রঃ রিনা ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে০৮ আগস্ট বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে এবং মামলার ঘটনায় জড়িত সহযোগী অপর আসামী মোঃ মাসুদ(৩৫), পিতা-মৃত শরীফ মুন্সী, সাং-হরিনকাটা(শরীফ মুন্সী বাড়ী), থানা-সেনবাগ, জেলা-নোয়াখালীর নাম প্রকাশ করে। পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লাশ উদ্ধারের ১২ ঘন্টার মধ্যে মামলার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।