বিকাশ চন্দ্র স্বর্নকার বগুড়া প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার সোনাতলার ঘোষপাড়া গ্রামে বিরোধের জেরে দেড় বছর ধরে পাঁচটি পরিবারকে কার্যত একঘরে করে রেখেছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। পরিবারের কারও সঙ্গেই গ্রামের অন্য বাসিন্দারা কথাবার্তা বলেন না। এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় উপাসনায়ও অংশ নিতে পারেন না তারা।
ভুক্তভোগীরা হলো পরিমল চন্দ্র ঘোষ ও তাঁ ভাই শিশির চন্দ্র ঘোষ, তাঁদের কাকাতো ভাই নির্মল ঘোষ, নরেশ ঘোষ ও গয়েশ্বর ঘোষের পরিবার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের পরিমল গত বছরের এপ্রিলে প্রতিবেশী গ্যাদা ঘোষের কাছে চার শতক জমি বিক্রি করেন। এর কয়েক দিন পর পরিমলের ভাই শিশির একই স্থানে থাকা আরও ছয় শতক জমি গ্যাদার ভাই সুজয় ঘোষের কাছে বিক্রির জন্য তিন লাখ টাকা বায়না নেন। এর মধ্যেই গ্যাদা ও সুজয় জমির টাকা পরিশোধ করে শিশিরকে দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে বলেন। কিন্তু শিশির ও নির্মলের জমি বুঝিয়ে দিতে দেরি হচ্ছিল।
এ নিয়ে গ্যাদা সহযোগীদের নিয়ে নির্মলকে মারধর করেন। বিষয়টি নিয়ে পরে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারিও হয়। গ্যাদার কাকা মন্টু ঘোষ স্থানীয় দুর্গামন্দিরের সভাপতি। তিনি সালিশ বসিয়ে পরিমল, শিশিরসহ তাদের পাঁচ পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরে করে দেন। গ্রামের বাকি ২৮টি হিন্দু পরিবারকে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা-চলাফেরা, সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ও একসঙ্গে ধর্মীয় উপাসনায় অংশ না নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।বিষয়টি স্বীকার করে ঘোষপাড়া সার্বজনীন মন্দির কমিটির সভাপতি মন্টু ঘোষের দাবি, জমির জন্য নির্মলরা বাহিরে থেকে লোকজন এনে তাদের ওপর হামলা করেছিল। গ্রামের ২৮টি হিন্দু পরিবারের অধিকাংশই তাদের আত্মীয়স্বজন। নির্মলদের পাঁচ পরিবারকে একঘরে করায় সবার সম্মতি রয়েছে। যদিও ঘোষপাড়ার হিন্দু পরিবারগুলোর কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। কয়েকজন জানান, মন্টু ঘোষের ভয়েই তারা পাঁচ পরিবারের কারও সঙ্গে মেশেন না।
উপজেলা পুজা উদযাপন এর সভাপতি অসিম কুমার জৈন বলেন, বিষয়টি আমরা ওই এলাকার লোকজন মারফত জানতে পেরেছি। তবে এর আগেও চেষ্টা করে তাদের একত্রিত করতে পারিনি।
পাকুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লতিফুল বারী বলেন, পাঁচ পরিবারকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি সমাধানে কয়েক দফা চিঠি দিলেও মন্টু ঘোষ সাড়া দেননি।
এরপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সোনাতলা থানার ওসি সৈকত হাসান বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ওই পাঁচ পরিবার ধর্মীয় রীতিনীতি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিক মন্ডল বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, এ ধরনের ঘটনা কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে দুপক্ষকে ডেকে শুনে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করিব।