• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
জগন্নাথপুর বাজারে আইরিন ভিসা কনসালটেন্সি ফার্ম এর উদ্বোধন রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র জগন্নাথপুরের নলজুর নদীর বেইলী ব্রীজটি এখন মরন ফাঁদ, ভারী যানচলাচলে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কৃর্তপক্ষ ডুমুরিয়ার চুকনগর বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন স্বামি দাবি করে বাঁশখালীতে তরুণীর অনশন নিয়ে ধুম্রজাল আমতলীতে পাগলা কুকুরের কামড়ে ৩২ জন আহত সেনবাগে ইদিলপুর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত বাঁশখালীতে ৬৪৫ বোতল বিদেশী মদ জব্দ, গাড়ি সহ গ্রেফতার-০৩ রেড ব্রিজ স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্লাশ পার্টি ও জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন আমতলীতে অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

মধুপুর ধনবাড়ী সাধারন মানুষের বিনোদনের অন্যতম কারিগর ফরিদ পাগলা আর নেই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আবদুল হামিদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ

টাঙ্গাইলের মধুপুর ধনবাড়ী সাধারন মানুষের বিনোদনের অন্যতম কারিগর ফরিদ পাগলা আর নেই। মধুপুর পৌরসভাধীন বকুলতলা টেংরী গ্রামের সাধারন মানুষের বিনোদনের অন্যতম কারিগর ফরিদ উদ্দিন (ফরিদ পাগলা) শনিবার (৯সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মৃত্যু বরণ করেন।

তিনি দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি উত্তর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাটবাজারে নানান রকম খেলা ও অঙ্গ রসের কথায় মানুষকে আনন্দ দেওয়াই ছিলো তার একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। সাংসারিক জীবনে তিনি ছিলেন তিন কন্যার জনক। বিভিন্ন হাটবাজারে তার কলা কৌশল দেখে মুহুর্তের মধ্যে শতশত লোকজন জমায়েত হয়ে যেতো। তার সঙ্গী হিসেবে ছিলো পৌরসভাধীন দামপাড়া গ্রামের জাফর পাগলা।সে ছোট একটি রিং এর ভিতর দিয়ে তার পুরো শরীর প্রবেশ করিয়ে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিতো।

একটি লম্বা কাঠির মাথায় থাল ঘুরানো ছিলো ফরিদ পাগলার আকর্ষনীয় একটি দর্শক নন্দিত খেলা। সেই আশির দশকে দর্শকদের উদ্দেশ্যে তার দেওয়া একটি সদাসত্য উক্তি আজও মানুষের মুখে মুখে রয়ে গেছে। বিভিন্ন কৌশলের খেলা, সার্কাস ও কথার রসে দর্শকদের আনন্দ দেওয়াই ছিল তার কাজ।খেলা শেষে তার তৈরি মাজন বিক্রি করতে গেলে দর্শকরা যখন নিতে চাইতেন না তখন তিনি বলতেন আমারটা নিবেন কে আমিত দেশী মানুষ।যারা দুরে থাইকা হেলিকপ্টার ভাইঙ্গা মধুপুর আইসা পড়ে বলে আমার ওষুদ ভাল তাগরটা নিবাইন। সাপে কামর দিবে না বলে তাবিজ দিয়া একশো টাকা নিয়া বাগবো তারাই বালা ঐ তাবিজ হাতে বাইন্ধা সাপের উপর পারা দিয়া দেইখো কামর দেয় না দেয় না। কামর দিয়া খারার উপড় ফালাইয়া দিব।

তার এসব কথা আজও মানুষের মনে হাসির খোরাক হয়ে আছে। দুরের লোক আইসা বলব আমার এ তাবীজ গলায় দিলে শিশু বাচ্চারা রাতে বিছানায় প্রশ্রাব করবে না সেটাই নিবেন। আমারটা নিবেন কে। যে তাবীজ একশ টাকা বেইচা তারা গেল সে তাবী গলায় বাইন্দা দিয়া রাইখেন বিছানায় প্রস্রাব করে কি ননা? তাই খালি তাবিজের ভরসা কইরোনা, রাইতে তুইলা তুইলা প্রশ্রাব করাইয়েন। সে হাট বাজারে মজমার মাধ্যমে বিভিন্ন ঔষধি গাছ গাছড়া দিয়ে দাতের মাজন বিক্রি করে যে টাকা উপার্জন করতেন তা দিয়েই তার এবং সঙ্গী জাফরের সংসার চালাতেন। এই উপার্জনের টাকা দিয়েই তার তিন কন্যাকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়েও দিয়েছেন।

প্রায় দুই তিন যুগ ধরে মানুষকে আনন্দ দিয়ে নিজের কষ্টকে তিনি লুকিয়ে রাখতেন। দীর্ঘদিন যাবত প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগে তিনি ভুগছিলেন। মানুষকে আনন্দ দিয়ে সামান্য আয়ের টাকায় তার তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তিনি এ সমাজের মানুষকে দেখিয়েছেন, কর্ম কোনোটাই ছোট নয়। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত না পেতে অসৎ পথে টাকা উপার্জন না করে নিজের রোজগারের টাকায় ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা অনেক আনন্দের।

তার জীবন বৃত্তান্ত ও অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে আসেন গরীব অসহায় হতদরিদ্র মানুষের শেষ ঠিকানার মহীয়সী নারী মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমীন।
যিনি দিনে অথবা রাতে যেকোনো সময় মধুপুরের নিপিড়ীত অসহায় মানুষের ডাকে ছুটে যান এবং যেকোনো সমস্যার সমাধান আদালত পর্যন্ত না গড়িয়ে নিজেই সমাধান করে থাকেন।

তিনি প্রায় ৩মাস আগে অসুস্থ ফরিদ উদ্দিনকে দেখতে তার বাড়িতে যান এবং চিকিৎসার জন্য তার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়াও তিনি মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রেখে ফ্রী চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার কয়েকদিন পর তার মৃত্যু হলো। রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় তার নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ