• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
বাঁশখালীতে ৬৪৫ বোতল বিদেশী মদ জব্দ, গাড়ি সহ গ্রেফতার-০৩ রেড ব্রিজ স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্লাশ পার্টি ও জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন আমতলীতে অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় হট্টগোল ও হাতাহাতি নোয়াখালীতে নিখোঁজের ১০ দিন পর খালে মিলল বেদের মরদেহ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রথমবার সচিবালয়ে বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভুল প্রমাণিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে জামায়াত নবলোক ও ওয়াটার এইড এর যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব টয়লেট দিবস উপলক্ষে “Gender Transformative WASH” বিষয়ে প্রধান শিক্ষকদের সাথে মত বিনিময় স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে ‘চক্ষুসেবায় নারীদের অভিগম্যতা নিশ্চিৎকরণ’ বিষয়ক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত ডুমুরিয়ার গোনালী একটি পতিত জমিতে জাতীয় ফুল শাপলা স্মৃতির আসনে জায়গা নিয়েছে

কপিলমুনি কলেজের (অবঃ) গুণি ও সর্বশ্রদ্ধেয় শিক্ষক কালিদাস চন্দ্রের জীবনাবসান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা)

না ফেরার দেশে চলে গেলেন কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞাণের প্রাক্তন অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ।কয়েক দিন আগে অসুস্থ্য হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে Life Support, Ventilator এ ICU তে থাকাবস্থায় ১৬ জুন ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বহুবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা পান।

কালিদাস চন্দ্র ১৯৫০ সালের ২০ নভেম্বর খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শ্রীযুক্ত সুধীর কৃষ্ণ চন্দ্র ও মাতা শ্রীমতী সরলা বালা চন্দ্র।

শিক্ষা জীবনে স্থানীয় হরিদাশকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে তার হাতে খড়ি। সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পরে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির হতে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৬৬ সালে এই কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির হতে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে সাতক্ষীরা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭১ সালে স্কলারশীপ নিয়ে সরকারি ব্রজলাল কলেজ হতে বিএস-সি (সম্মান) পাশ করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীণ শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি রেজিস্ট্রেশন করেন এবং ক্যাম্প কমান্ডার খায়বার হোসেন পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহাকুমার টেট্ রা মুক্তি ফৌজের রিসিপশন ক্যাম্পে অফিশিয়াল পদে কর্মরত হন। এরপর যুদ্ধ শেষে তিনি স্বাধীন- সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

এরপর ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত বিএস-সি ( সম্মান) পরীক্ষা- ১৯৭১ এ অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি আবারও সরকারি স্কলারশীপ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে এম এস-সি সম্পন্ন করেন।

এরপর ১৯৭৪ সালের ৬ জুলাই তিনি পাইকগাছার কপিলমুনি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে দীর্ঘ ৩৬ বছর ৪ মাস ১৪ দিন সুনামের সাথে অধ্যাপনা করে ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করেনে। এরপর তাঁকে উক্ত কলেজের পরিচালনা পরিষদের শিক্ষানুরাগী সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।

উল্লেখ্য অধ্যাপনা জীবনে তিনি প্রায় ৩০ বছর যাবৎ যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষক এবং ৩ বছর প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালে নিজ এলাকার জয়দেব কুমার ভদ্রের নেতৃত্বে মানিক ভদ্রসহ গ্রামের এক দল মেধাবী ছাত্র একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য তার মতামতসহ বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা করতে বলেন। এরপর ১৯৯০ সালের ১০ই ডিসেম্বর মাহমুদকাটি হরিসভা প্রাঙ্গণে লাইব্রেরী বাস্তবনে একটি সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ্রের সভাপতিত্বে সোনালী সভায় আত্নপ্রকাশ ঘটে দেশের অন্যতম প্রধান গ্রামীণ পাঠাগার অনির্বাণ লাইব্রেরির। তিনি লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা সভাপতি হিসাবে ১৯৯০ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১বছর দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে লাইব্রেরির গঠনতন্ত্র প্রনয়নে নেতৃত্ব দেন। ২০২০ সাল ১লা জানুয়ারি সময়ের প্রয়োজনে তাকে ফের লাইব্রেরীর কার্যকরী পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদায় নেন তিনি। এসময় অনির্বাণ লাইব্রেরী আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে বিদায় সম্মাননা জানায়। সাথে সাথে এর পথিকৃৎ হিসেবে অনির্বাণের আধুনিক মিলনায়তনের নামকরণ করা হয় তাঁর নামে।

১৯৭৮ সালে তিনি মাহমুদকাটি গ্রামে বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব দত্তের কন্যা ভারতী দত্ত কে বিয়ে করেন তিনি। দাম্পত্য জীবনে তিনি চার মেয়ের জনক।

কন্যা ও জামাতারা হলেন:
১. ডাঃ মহুয়া চন্দ্র, MBBS, BCS (Health) FCPS (Pediatrics), FCPS (Child neurology) বর্তমান সলিমুল্লাহ মেডিকেলে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। তার স্বামী ডাঃ প্রভাত সরকার MBBS, BCS (Health), MCPS( Medicines), MD (Neurology) বর্তমানে বাংলাদেশ নিউরো সায়েন্সস এন্ড হসপিটাল এ সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।

২. ডাঃ পম্পা চন্দ্র, MBBS, BCS (Health) FCPS ( Darmatology & venerology) বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অফিসার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। তার স্বামী ডাঃ মিলন চৌধুরী MBBS, BCS (Health) FCPS (ENT) বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হেডনেক সার্জন হিসাবে কর্মরত আছেন।

৩.মৌমিতা চন্দ্র, BSc (Ag Eng ) MS (Farm power & Machinery) Diploma (Banking) বর্তমানে সৌনালী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এ প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। স্বামী ডাঃ কল্যাণাশীষ সরদার MBBS, BCS (Health) FCPS (Medicine) ইনি বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।

৪.কুসুম কেয়া চন্দ্র, ২০১৯ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও স্কলারশীপ অর্জন করে। বর্তমানে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী।

শুক্রবার ভোর পৌনে ৫ টায় মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওযা হয় দীর্ঘ দিনের কর্র্মস্থল কপিলমুনি কলেজে। সেখানে তার সহকর্মীসহ শিক্ষক-কর্মচারী ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান অনির্বাণ লাইব্রেরী চত্ত্বরে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়।

এদিকে প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুতে শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন, কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্যাহ বাহার, পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও দীপ্ত নিউজ২৪.কম ও ইনিপেন্ডেন্ট বিডি.নিউজের সম্পাদক শেখ দীন মাহমুদ, আনন্দ মোহন বিশ্বাস, রাম প্রসাদ পাল, প্রনব কান্তি মন্ডল প্রমূখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ