শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথ উৎসব কার্যক্রম আজ শুরু কাল রথটান,প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রী
শনিবার (৬ জুলাই) রাতে শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ রথ উৎসব ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ উৎসব ধামরাইয়ের চারশত বছরের সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথোৎসব এর ধর্মীয় রীতি নীতি অনুসরন করে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু। আগামীকাল রবিবার রথযাত্রার রথটান উৎসব শুরু হচ্ছে।
রথোৎসব-মহামিলন। ধর্ম,বর্ণ শ্রেণী পেশা,ধনী,গরীব নির্বিশষে রথের রশি ধরে টানছেন ,অানন্দ বিনিময় করছেন, এই সাম্যই রথযাত্রার মূল শিক্ষা। ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায়,বাংলা ১০৭৯ সালে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২০৪ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১২৫ বছর পর্যন্ত রথযাত্রা চলে এসেছে। তারপর বালিয়াটি জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় রথযাত্রা অব্যাহত থেকেছে , আরও ১৪৬ বছর। বাংলা ১৩৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপের পর মির্জাপুরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এগিয়ে আসেন রথযাত্রার উৎসব আয়োজন যা আজও অব্যাহত আছে। তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী শ্রী রাজীব প্রসাদ সাহা,স্হানীয় গণমান্য ব্যাক্তি এবং শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির কমিটির সহযোগিতায় শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের সেবা ও রথ পরিচালনায় দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করে যাচ্ছেন।
৭ জুলাই রবিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা ও মাসব্যাপী রথমেলা উৎসব। এ দেশের সনাতনধর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই ধামরাইয়ে।
১৫জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথ যাত্রা বা পুর্নযাত্রা অনুষ্ঠান। রথমেলা চলবে প্রায় মাসব্যাপী। রথমেলা উপলক্ষে সার্কাস সহ বিভিন্ন বিনোদন মুলক ষ্টল বসেছে মেলায়। মেলায় আর্কষনীয় সার্কাসের হাতি এখন ধামরাই চষে বেড়াচ্ছে। আনন্দ উৎসবে মেতেছে শিশু কিশোররা।
এ’রথ উৎসব হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় প্রায় ৪০০ শত বৎসর পূর্ব হতে শুরু হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারনে এই উৎসব ব্যাপক ভাবে সার্বজনীনতা লাভ করেছে। এই ধর্মীয় রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ও ইতিহাস খ্যাত ধামরাইয়ে বেড়ানোর জন্য প্রতিটি বাসগৃহে দুরদুরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন এসে ভীড় করে। অতীতে বাংলাদেশ নয় বিদেশ থেকেও হাজারো ভক্তবৃন্দরা রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে ধামরাইয়ে এসে সমাগত হতো। এখনো আসে। পুরো উৎসবটিই কালের বিবর্তনে এখন ধর্মীয় ভাবধারা নয় সার্বজনীন স্রোতধারায় প্রভাবিত হচ্ছে।
এই ঐতিহবাহী রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা ধামরাইয়ে এখন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে,মেলায় শত শত ষ্টল বসেছে। এবং কায়েত পাড়ান্থ শ্রী শ্রী যশোমাধব মাধব মন্দির পরিচালনা কমিটি কর্তৃক রথের যাবতীয় ও সাজ সজ্জার কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সুসম্পন্ন করেছে।
এবার রথ উৎসব ও মেলার উদ্বোধনী অনষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মানণীয় মন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন।
বিশেষ অতিথিবৃন্দ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি,ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি- বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বেনজীর আহমদ,বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় কুমার ভার্মা।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ অতিথি হিসেবে থাকবেন ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো: আসাদুজ্জামান(পিপিএম)বার,,শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস(অবঃ), শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের ব্যবস্হাপনা পরিচালক ও শহীদ দানবীর আর পি সাহার দৌহিত্র রাজিব প্রসাদ সাহা প্রমূখ।
রথ উৎসব উপলক্ষে ৭ জুলাই সকাল ১০ টায় কায়েতপাড়াস্থ রথ খোলায় ও রথের সামনে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এ সময় ডাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা ও মহিলাদের উলু ধ্বনিতে মাধব মন্দিরের বর্তমান প্রধান পুরোহিত উত্তম কুমার গাঙ্গুলী ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। দুপুরে মাধব মন্দিরে ভোগ রাগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত হাজারো ভক্ত বৃন্দের মাঝে।
বিকেলে রথের সামনে লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রথটানা হবে বলে মন্দির কমিটির সদস্য আশীষ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন।
বিকেল ৪টায় মাধব মন্দির থেকে মাধব বিগ্রহসহ অন্যান্য বিগ্রহগুলি নিয়ে এসে সারাবছর যেখানে রথটি থাকে সেই রথ খোলায়,রথের উপর মূর্তিগুলি স্থাপন করা হবে। এর পর বিকেল সাড়ে ৪ টায় রথের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রথ খোলায় অস্থায়ী স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।
এই অনুষ্ঠানের আলোচানা সভা শেষে প্রধান অতিথী রথ উৎসবের পুরোহিত হাতে প্রতিকী রশি প্রদানের মাধ্যমে রথ টানার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করবেন। এই রথটি মূর্তি সমেত লাখো ভক্ত নর-নারী পাটের রশি ধরে কায়েত পাড়ার রথ খোলা থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে টেনে পৌর এলাকার গোপনগরে। এখানেই রথটি প্রতিবছরের ন্যায় ৯ দিন অবস্থান করবে।
মাধব ও অন্যান্য বিগ্রহগুলি রথ থেকে নামিয়ে নিয়ে ৯ দিন পূজারীদের দ্বারা পুজিত হবে কথিত মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে।৯ দিন পর আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব। পূর্বের ন্যায় মাধব ও অন্যান্য দেব-দেবী বিগ্রহ রথে চড়িয়ে ১৫জুলাই বিকেল ৬ টায় টেনে আনবে পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়াস্থ রথখোলায়।
এখান থেকে মূর্তি গুলি চলে যাবে পুরোনো মাধবের নিজ আলয় মন্দিরে। রথ খোলায় রথটি সারা বছর থাকে বলে এই স্থানটির নামকরণ হয়েছে রথ খোলা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার ও তাদের দোসররা শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গগনচুম্বী দেবদেবীর কারুকার্য খচিত আকর্ষণীয় ৭৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪৪ ফুট পাশে মুল্যবান কাঠের দর্শনীয় রথ খানা পুড়িয়ে দিয়ে বাঙালীর উৎসব ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে দেয়।