এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা):
এবার ষাটোর্ধ এক বয়োবৃদ্ধার জায়গা জমি থেকে উচ্ছেদ ও বেদখল করতে হামলা ও একের পর এক মামলায় জড়িয়ে রীতিমতো হয়রানি করে চলেছে আনোয়ার হোসেন নামে এক প্রতিবেশী। ইতোমধ্যে ডজনখানেক মামলার ঘানি টানতে কোর্ট বারান্দায় দিন কাটছে তার।
সরলমনা বৃদ্ধ ওয়াজেদ আলী যাকে পান জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকেন ও আকুতি জানাতে থাকেন সমাজের মানুষের কাছে। আর এমন ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কপিলমুনির পাশ্ববর্তী গদাইপুর ইউপির চেচুয়া গ্রামে। জানাগেছে, কপিলমুনির পার্শ্ববর্তী গদাইপুরের চেঁচুয়া গ্রামে ষাটোর্ধ বয়োবৃদ্ধ ওয়াজেদ আলীর নামে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ডজন খানেক অভিযোগ। একাধিক মামলা, জিডি ও সর্বশেষ তার দীর্ঘদিনের ক্ষুদ্র ব্যবসাটুকু কলঙ্কিত করতে ছাড়েনি প্রতিবেশী আনোয়ার।
আয়ের উৎস মাছের ব্যবসাটুকু বন্ধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করে হয়রানি করেছেন বলে জানান তিনি। এবার চেক প্রতারণার মামলা করে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আনোয়ার হোসেন নামের ওই ব্যাক্তি।
কাগজপত্র ও ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানযায়, শুধুমাত্র জায়গা জমির বিরোধের জের ধরে জমি আত্মসাতের জন্যই হয়রানি মুলক মামলাগুলো করেছে প্রতিবেশী আনোয়ার। ভুক্তভোগী বৃদ্ধা ওয়াজেদ আলী জানান, ১৯৯৪ সালে চেঁচুয়া মৌজায় সাবেক ৬ নং খতিয়ানে দাগ নং ৫৭, ৫৮ ও জমির পরিমান ২৩ শতকের মধ্যে পৌনে ৬ শতক সম্পত্তি মৃত সরূপ মোড়লের পুত্র মুজিবর রহমান মোড়ল ও মুলতান মোড়লের কাছ থেকে ৮৭৩ নং কবলা দলিলমুলে খরিদ করে সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগদখল ও শান্তিপূর্ণ বসবাস করে আসছেন তিনি। বৃদ্ধা ওয়াজেদ শরীকাংশের জমি ক্রয় করায় আনোয়ার তার বাস্ত সম্পত্তির কিয়দাংশ দখল ও একলপ্তা করে নিতে চেষ্টা করে, বিনিময়ে বৃদ্ধা ওয়াজেদ কে বিভিন্ন দাগ দিয়ে তা পুরণ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় আনোয়ার।
বৃদ্ধা ওয়াজেদ আলীর বসবাসকৃত বসত ভিটার স্বল্প জমি বিধায় টুকরো টুকরো করে ভীন্ন দাগে গেলে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ার কথা ভেবে বৃদ্ধা ওয়াজেদ আলী তার প্রস্তাব প্রত্যখ্যান করেন। ঘটনা এতটুকুই মাত্র। এরপর থেকে শুরু হয় অত্যাচার ও নানান হয়রানির খেলা। ইতোমধ্যে বৃদ্ধা ওয়াজেদ আলীর স্বাক্ষর নকল করে এক ভুয়া সোলেনামা সৃষ্টি করে জরিপের রেকর্ড এমনকি নামজারী করার চেষ্টা করছে আনোয়ার। সর্বশেষ ধুর্ত আনোয়ার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা সলেহনামা উত্থাপন করে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে এ সংক্রান্তে একটি মামলাও করেছে।
যার নাং ৩৩০/২১। ভুক্তভোগী জানান, এরপর থেকে চেক প্রতারণার এ মামলাটি উদ্ভবের মুল কারণ। চেকের বিষয়ে তিনি জানান, একই গ্রাম প্রতিবেশী মৃত মোকাম মোড়লের পুত্র আবুল কাশেম এর কাছে কিছু জায়গা বিক্রির জন্য টাকা নিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় গ্রহন করা টাকার বিপরীতে ডকুমেন্টস হিসেবে একটি চেক ও কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়েছেন তিনি। অথচ জমি রেজিষ্টীর দিনে প্রদানকৃত স্ট্যাম্প ফেরৎ দিলেও হারিয়ে গেছে এমন অজুহাত দেখিয়ে প্রদানকৃত চেকটি ফেরৎ দেয়নি কাশেম। এক পর্যায় কিছুদিন পর প্রতিপক্ষ আনোয়ারের হাতে চেকটি হস্তান্তর করেন কাশেম। আর ওই চেকটি হাতে পেয়েই ধুর্ত আনোয়ার চেক প্রতারণার দায় চাপিয়ে আদালতে মামলা করে।
যার নং ১০০৩/২২। বৃদ্ধা ওয়াজেদ জানান, আনোয়ারের সাথে জায়গা জমি নিয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা চলমান। বিরোধ থাকাবস্থায় তার সাথে কিভাবে লেনদেন ও চেক হস্তান্তরের ঘটনা ঘটলো আমার। যা কোন ভাবেই সম্ভব না, এটা কাশেমকে দেয়া সেই চেকের পাতা বলে দৃঢ়তার সাথে জানান বৃদ্ধা ওয়াজেদ। তিনি আরো বলেন এটা পরিকল্পিত ভাবে আনোয়ার ও কাশেম মিলে আমাকে ফাঁসাতে এই মামলা করেছে।
শুধু তাই নয়, চেক মামলাটি প্রতিষ্ঠিত করতে গত ৫/৪/২৩ তারিখে কাল্পনিক গল্প তৈরি করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বৃদ্ধ ওয়াজেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অপর একটি মামলা করে আনোয়ার। যার নাং ৪০৬/২৩। এ বিষয়ে আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি। ভুক্তভোগী ওয়াজেদ আলীর এমন বিষয়টির গভীরে অনেক স্পর্শকাতর ও পরিকল্পিত হয়রানিকর ঘটনাবহুল তথ্য লুকায়িত রয়েছে। যার সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ওয়াজেদ ও তার পরিবার।