০৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ডুমুরিয়ার তরমুজ যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি:
শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি:

ডুমুরিয়ার তরমুজ যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

 

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নলঘোনা বিলে মাচা পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিমাণে চাষ হয়েছে বর্ষাকালীন তরমুজ। মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অফসিজন তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে বিলের অধিকাংশ কৃষকের। এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল বাজারে।

জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার নলঘোনা বিলে মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে বর্ষাকালীন তরমুজ। জমিতে পানি জমে থাকার কারণে কৃষকরা বিকল্প এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে একই জমিতে ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি ঘেরের আইলে তরমুজ ও অন্যান্য শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। কৃষি প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন কৃষকরা বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও তরমুজ চাষে সফল হচ্ছেন।

ডুমুরিয়ার তরমুজ মিষ্টি, সুস্বাদু, পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং আকারে আকর্ষণীয় হওয়ায় স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরের বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। একেকটি তরমুজের ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি, এমনকি তার চেয়েও বেশি। ভিতরে টকটকে লাল রঙ এবং অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই বিলে ডুমুরিয়া, রাজিবপুর দক্ষিণমহল, রাজাপুর, মৈখালী, ঘোনাবান্দা, উলা, তালতলা, লোহাইডাঙ্গা ও কাটাখালী এলাকার প্রায় ৪-৫ শত কৃষক বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। যদিও এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে, তবে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভের আশায় আশাবাদী। প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে বলে জানান তারা। এছাড়াও দক্ষিণ ডুমুরিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ বিলে মাচা পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণে অফসিজন তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজিবপুর দক্ষিণমহল তালতলা মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নলঘোনা বিলের তরমুজ শ্রীমঙ্গলে পাঠানোর জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক কৃষক। এ সময় কৃষক মো. ওসমান গনির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে তিনি তরমুজ চাষ করেছেন। ২৮০টি মাদায় ৫৬০টি চারা রোপণ করেছিলেন। এ বছরই তিনি প্রথমবার এই তরমুজ চাষ করেছেন। শুরুতে প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩৬-৩৭ টাকায় বিক্রি করছেন।

অন্য কৃষক আবুল কালাম শেখ জানান, তিনি দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। একেকটির ওজন হয়েছে ৪ থেকে ৫ কেজি। ভালো দাম পাওয়ায় তিনি যথেষ্ট লাভের আশা করছেন।

তরমুজ ব্যাপারী নাজমুল গাজি ও হাফিজুর রহমান জানান, স্থানীয় বাজারের তুলনায় বাইরের বাজারে দাম কিছুটা বেশি। যদিও ট্রাক ভাড়া বেশি, তবুও তুলনামূলকভাবে বাজারে ভালো দাম মিলছে। মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল বাজারে তরমুজের চাহিদা বেশ ভালো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, ডুমুরিয়ায় এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ মেট্রিক টন। নলঘোনা, কুলবাড়িয়া, খুটোখালী, শোভনা, আটলিয়া, পাতিবুনিয়াসহ বিশেষ করে দক্ষিণ ডুমুরিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে এ তরমুজ।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০১:৪১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১১০

ডুমুরিয়ার তরমুজ যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

আপডেট: ০১:৪১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডুমুরিয়ার তরমুজ যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

 

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নলঘোনা বিলে মাচা পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিমাণে চাষ হয়েছে বর্ষাকালীন তরমুজ। মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অফসিজন তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে বিলের অধিকাংশ কৃষকের। এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল বাজারে।

জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার নলঘোনা বিলে মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে বর্ষাকালীন তরমুজ। জমিতে পানি জমে থাকার কারণে কৃষকরা বিকল্প এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে একই জমিতে ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি ঘেরের আইলে তরমুজ ও অন্যান্য শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। কৃষি প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন কৃষকরা বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও তরমুজ চাষে সফল হচ্ছেন।

ডুমুরিয়ার তরমুজ মিষ্টি, সুস্বাদু, পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং আকারে আকর্ষণীয় হওয়ায় স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরের বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। একেকটি তরমুজের ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি, এমনকি তার চেয়েও বেশি। ভিতরে টকটকে লাল রঙ এবং অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই বিলে ডুমুরিয়া, রাজিবপুর দক্ষিণমহল, রাজাপুর, মৈখালী, ঘোনাবান্দা, উলা, তালতলা, লোহাইডাঙ্গা ও কাটাখালী এলাকার প্রায় ৪-৫ শত কৃষক বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। যদিও এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে, তবে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভের আশায় আশাবাদী। প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে বলে জানান তারা। এছাড়াও দক্ষিণ ডুমুরিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ বিলে মাচা পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণে অফসিজন তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজিবপুর দক্ষিণমহল তালতলা মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নলঘোনা বিলের তরমুজ শ্রীমঙ্গলে পাঠানোর জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক কৃষক। এ সময় কৃষক মো. ওসমান গনির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে তিনি তরমুজ চাষ করেছেন। ২৮০টি মাদায় ৫৬০টি চারা রোপণ করেছিলেন। এ বছরই তিনি প্রথমবার এই তরমুজ চাষ করেছেন। শুরুতে প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩৬-৩৭ টাকায় বিক্রি করছেন।

অন্য কৃষক আবুল কালাম শেখ জানান, তিনি দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। একেকটির ওজন হয়েছে ৪ থেকে ৫ কেজি। ভালো দাম পাওয়ায় তিনি যথেষ্ট লাভের আশা করছেন।

তরমুজ ব্যাপারী নাজমুল গাজি ও হাফিজুর রহমান জানান, স্থানীয় বাজারের তুলনায় বাইরের বাজারে দাম কিছুটা বেশি। যদিও ট্রাক ভাড়া বেশি, তবুও তুলনামূলকভাবে বাজারে ভালো দাম মিলছে। মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল বাজারে তরমুজের চাহিদা বেশ ভালো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, ডুমুরিয়ায় এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ মেট্রিক টন। নলঘোনা, কুলবাড়িয়া, খুটোখালী, শোভনা, আটলিয়া, পাতিবুনিয়াসহ বিশেষ করে দক্ষিণ ডুমুরিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে এ তরমুজ।