এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা):
কপিলমুনিতে ইলেকট্রিক শকে ক্ষত-বিক্ষত অমিতের শরীর কান ও লজ্জাস্থান দিয়ে বেরিয়ে আসছে রক্ত। সকাল হতে মধ্যরাত অবধি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রিক শকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে অমিতের শরীর। এতেকরে দুইকান ও লজ্জা স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভীত সন্ত্রস্থ অমিতের পরিবার প্রভাবশালীদের ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।
অভিযুক্ত ধর্নাঢ্য এ ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে মিশনে নেমেছে স্থানীয় পুঁজিপতিদের একাংশ। ইতোমধ্যে অমিতের মাকে জিম্মি করে সমঝোতার নামে প্রহসনের এক সালিশী বৈঠকে আইনের আশ্রয় না নেওয়া শর্তে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটিয়েছে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি বাজারের এক কাপড় ব্যবসায়ীর ছেলে।
ভুক্তভোগী পরিবার এবং প্রতিবেশীরা জানান, কপিলমুনি বাজারের প্রভাবশালী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অসিম সাধুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মহাপ্রভু বস্ত্রালয়ের কর্মচারী অমিত। ঘটনার দিন দোকান মালিকের দাম্ভিক পুত্র বিশ্বজিৎ সাধু দোকান কর্মচারী অমিতকে তার বাজারস্থ আলীশান বাড়িতে ডেকে পাঠায়। চুরির অপরাধে তাকে সারাদিন বিরামহীন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। একপর্যায়ে লোমহর্ষক এই নাটকে অংশগ্রহন করেন বিশ্বজিৎ সাধুর পছন্দের ব্যক্তিরা।
যারা অমিতের উপর অমানবিক নির্যাতনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহন করে। অমিতের শরীরে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমিতের শরীরের নির্যাতনের লোমহর্ষক একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ হলে বিষয়টি এলাকায় চাউর হতে শুরু করে।
এদিকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সাধু পুত্রকে রক্ষায় একটি মহল তড়িঘড়ি করে ঘটনার রাতে অমিতের অসহায় মাকে জিম্মি করে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করে বলে অমিতের এক মাসির ছেলে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তিনি জানান, অমিতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার দুই কানসহ লজ্জা স্থান দিয়ে নির্যাতনের পর রক্ত বেরিয়ে আসছে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরবর্তীতে ঘটনার দিন মধ্যরাতে তথাকথিত মধ্যস্থাকারীদের উপস্থিতিতে অমিতকে তার অসহায় হতদরিদ্র মা ও মাসির ছেলে উদয় অধিকারীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সে রাতে সাদা স্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর করিয়ে নেয় বিশ্বজিৎ সাধু ও তার সহযোগীরা দোসররা। মৃত্যুর আশঙ্কাকে ভুলে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধারে হতদরিদ্র অসহায় মা নিরুপায় হয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ছেলেকে মুক্ত করেন।
অমিতের নিকটাত্মীয় তাকে প্রথমে পাইকগাছা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসা ভালো হয়নি বলে জানাগেছে। এদিকে সুচিকিৎসার সুবন্দোবস্ত না করে বরং পরবর্তীতে অমিতের নির্যাতনের ভিডিও ক্লিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে বিশ্বজিৎকে রক্ষার মিশনে স্থানীয় আ’লীগ নেতার কক্ষে সালিশের নামে প্রহসনের কাজটি ঘটে। অমিতের সকল অপরাধের তৈরি কেচ্ছা মওকুফ, চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং নির্যাতনের পর সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া কাগজপত্র ফেরত দেওয়া হয় বলে জানায় অমিতের এক নিকট আত্মীয়। অবশ্য অমিতের মা জড়তা ও ভীত সন্ত্রস্তকন্ঠে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা আমার ছেলের চিকিৎসা খরচ দিতে চেয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে বের হওয়া রক্ত বন্ধ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, বন্ধ হয়েছে। অমিতকে মোবাইল দেন এমনটি বললে তিনি জানান, অমিতকে খালাবাড়ি (মাসি) তে রেখে এসেছি।
অবশ্য অমিতের এক প্রতিবেশী জানান, অমিতকে কারও সাথে দেখা করতে না দেওয়াতে তারা হয়তো এমনটি বলছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার কারনে অমিতের শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো দাগের চিহ্ন রয়েছে। দু’কানে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দেওয়ায় ছোট ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা না পেলে পঙ্গুত্ব বরণ কিংবা ব্রেন ডিজঅর্ডার হতে পারে।
স্থানীয় প্রদীপ অধিকারী মন্তব্য করেন, কপিলমুনিতে বিশ্বজিৎ সাধু যেন নয়া এরশাদ শিকদার সেজেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বজিৎ সাধুর ব্যবহৃত ফোনে যোগাযোগ করা হলে সে ফোন রিসিভ করেনি।
অন্যদিকে অমিতের নির্যাতনের ঘটনার পরের দিনই বিশ্বজিৎ সাধুর একমাত্র বোন রূপা সাধু হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তিনি বেশ কিছুদিন পারিবারিক কলহের জের ধরে পিত্রালয়ে অবস্থান করছিলেন। এ খবর লেখা পর্যন্ত রূপা সাধু খুলনার একটি বেসরকারির ক্লিনিকে চিকিৎসা শেষে পিত্রালয়ে অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে রূপা সাধুর স্বামী গৌরঙ্গ সাধুর অভিযোগের আঙ্গুলটিও তার শ্যালক বিশ্বজিৎ সাধুর দিকে তুলেছেন। তবে অমিতের নির্যাতনের ঘটনার সাথে এর কোন যোগ সূত্র আছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। এ ব্যাপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, কেউ তাকে চুরি ঘটনার কোন অভিযোগ করেনি, তবে নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখেছেন। বিষয়টি বর্বরোচিত ও দুঃখজনক। এ ঘটনায় দোষিদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।